Friday 8 October 2021

ওঠো, জাগো, স্বধর্মপালনে তৎপর হও


ওঠো, জাগো, স্বধর্মপালনে তৎপর হও

----------------------------------------------------


প্রত্যেকটি হিন্দুধর্ম প্রচারকের প্রচারকর্মকালে বলা উচিত যে হিন্দুরা যেন নিজধর্ম ত্যাগ না করেন | গীতার বাণী : 'স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম ভয়াবহঃ |' অর্থাৎ, নিজপ্রকৃতি অনুসারে বৈদিক শাস্ত্রানুযায়ী চলে প্রাণ বিসর্জন দেওয়াও শ্রেয়কর্ম কিন্তু পরের অনুকরণ করে, পরমতাবলম্বি হওয়া ভয়ঙ্কর | পূর্বক্ষেত্রে শরীরের বিনাশ হতে পারে বড়জোর কিন্তু সংস্কারগত সর্বনাশ হবে না কোনমতেই | কিন্তু উত্তরক্ষেত্রে সমূলে বিনাশ অবশ্যম্ভাবী |


ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম কোটি কোটি হিন্দুর ধর্মান্তর করিয়ে হিন্দুসমাজের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করেছে | একদিন ধর্মপিপাসু হিন্দু নিজ বদান্যতার দ্বারা যে খ্রীষ্ট ও ইসলাম ধর্মদ্বয়কে নিজগৃহে সাদরে স্থান দিয়েছিলেন সেই ধর্মদুটিই প্রতিদানে তাঁর সর্বনাশ সাধন করেছিল | 


মধ্যপ্রাচ্যের এই ধর্মদুটি ধর্মান্তকরণকেই মুখ্যজ্ঞান করে | সারা পৃথিবীর মানুষ এদের মতাবলম্বি হবেন, এইটিই এই দুটি ধর্মের বাস্তবক্ষেত্রে মূল ভাব ও অনুপ্রেরণা | ভারতবর্ষের জনসাধারণকে ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে নিজধর্ম প্রসারের এই মনোভাব নিয়েই এরা আমাদের দেশে প্রবেশ করেছিল | ছলে, বলে, কৌশলে তা করেওছে তারা | ফলে অগণিত ভারতীয় ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টধর্ম ও ইসলামধর্মে দীক্ষিত হন | 


সহস্রবর্ষের পরাধীনতার পর যখন দেশ স্বাধীন হল তখন মুসলমানরা হিন্দুদের সাথে সহাবস্থানে রাজী হল না ও বর্বরোচিত হিংসক আচরণের দ্বারা দেশবিভাগ সম্পন্ন করল | ১৬ই অগস্ট, ১৯৪৬ কলকাতার বুকে ও তৎপরবর্তী দুইমাস ধরে নোয়াখালিতে যে নৃশংসভাবে হিন্দুর গণসংহার সংসাধিত হল তাঁদের মুসলমান ভাইদের হাতে তাতে মহাত্মাজী আতঙ্কিত হয়ে রাজী হয়ে যান দেশবিভাগে | ফলে ১৪ই অগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ই অগস্ট বিভাজিত ভারতবর্ষ, এই দুই dominionএর জন্ম হয় | মুহম্মদ আলি জিন্না ও তাঁর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের রাজনীতিবিদরা মাতৃহন্তা হলেন যদিও তাঁরা কোনওদিনই হয়ত ভারতবর্ষকে জননী জ্ঞান করেননি | আর এই সর্বনাশের পৌরোহিত্য করলেন বৃটিষরা যাঁরা চিরতরে ভারত দুর্বল, মেরুদণ্ডহীন হয়ে থাক, এইটি চেয়েছিলেন |


খাল কেটে কি কেউ কুমীর ডাকে ? ডাকে বইকি | হিন্দু ডাকে, বার বার ডাকে | আর তার ফল হাজার বছরের দাসত্ব, সংস্কৃতির সর্বনাশ, ধর্মের ধ্বংস, মানুষের মর্মান্তিক পরিণতি ও দেশের ভৌগলিক বিভাজন | ভারতের জাতিয় চরিত্রই বহুলাংশে পালটে গেছে এই মধ্যপ্রাচ্য প্রভাবে | সেই সনাতন চরিত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে | তবেই ভারতের মুক্তি |


স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়লে আমরা জানতে পারি ভারতকে যথার্থ | সাধে রবীন্দ্রনাথ রোমেঁ রোলোঁকে ভারতকে জানার জন্য বিবেকানন্দ পড়তে বলেছিলেন ? কবির মনীষার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় তাঁর এই অন্তর্দৃষ্টি দেখে | যথার্থই এই দুই প্রতিভা ছিলেন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ রত্ন সে যুগে | এঁদের সাথে যুক্ত করি রামমোহন, বঙ্কিম, নিবেদিতা, গান্ধী ও অরবিন্দকে যাঁদের মনীষায় ভারাত্মার মূল সুরটি ধরা দিয়েছিল সর্বসাধারণের সেই ভাবগ্রহণের জন্য |


বিবেকানন্দ পড়লে তবে কি জানা যায় ? ভারতবর্ষের আত্মাকে, তার ভাবের বিবর্তনের ধারাকে, তার ধর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাসকে | সনাতন ভারতের মনীষিরা কোনকালেই ইতিহাস রচনায় মন দেননি | তাঁদের মুখ্য লক্ষ্য  ছিল জগতপ্রপঞ্চের মায়িক ব্যূহ ভেদ করে কিভাবে ব্রহ্মদর্শন করা যায় | সত্ত্বগুণপ্রধান এই সকল মুনিঋষিরা তাই ভারতের কোন বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাস রেখে যাননি | এই কাজটি সংক্ষিপ্তসারে সার্বিকভাবে করেছিলেন শেষে স্বামী বিবেকানন্দ | দিব্যদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন স্বামীজী ভারতের গৌরবময় অতীত ইতিহাসে, তার বর্তমান দৈন্যদশায় ও তার স্বর্ণোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরিণতির দিকে | এই দিব্যদর্শনে যা প্রকাশিত হয় তাই ভারতের মূলভাবের ইতিহাস | বাকি কাজ শূণ্যস্থান পূর্ণ করার | তা ঐতিহাসিকেরা করে চলেছেন, আরো করবেন ক্রমশঃ | কিন্তু মূল ভাবটি ধরেছেন স্বামীজী এবং সেই কাঠামো ধরেই কাজ হবে ভবিষ্যতে |


ভাবটি কি ?


ভারত কর্মভূমি, ভোগভূমি নয় | এদেশ কর্মবন্ধন হতে মুক্তি পাওয়ার দেশ, কর্মশৃঙ্খল রচনার দেশ নয় | ভারত পুণ্যভূমি, যে দেশে প্রতিটি জীবকে তার কর্মের শেষ হিসেব মেটাতে আসতে হবে ব্রহ্মলীন হওয়ার পূর্বলগ্নে | ভারত আধ্যাত্মিকতার শীর্ষ অনুভূতির দেশ, যে দেশে ঋষি বিরাজ করেছেন যুগে যুগে, আজও বিরাজ করেন | ভারত ভগবানের পার্থিব আবাসস্থল, ঠাকুরের ভাষায়, ভগবানের বৈঠকখানা |


এই ভারতকে স্বামীজী চিনিয়েছেন, এবার আমাদের চিনে নিতে হবে তাকে | তবেই আমাদের দেশের মুক্তি কারণ আজও আমরা মানসিকভাবে পরাধীন | হাজার বছরের অন্ধকার গুহায় আলো জ্বেলেছেন স্বামীজী কিন্তু আমরা চোখ মেলে এখনও আলোকিত প্রকোষ্ঠের দিকে তাকাইনি | তাই আজও চোখে পড়েনি প্রস্তরগাত্রে আঁকা অজন্তা ইলোরা | এখন চোখ খোলার অপেক্ষা | বাকি, দৃশ্য প্রস্তুত যুগ যুগ ধরে | দেশের এই গহনগুহায় প্রবেশের উপায় বিবেকানন্দপ্রদত্ত যোগমার্গে গমন | স্বীয় হৃদয়গুহায় দেখতে পাবো দেশের ভাস্বর ভবিষ্যৎ | কর্ম চাই, কর্ম, যার দ্বারা এই অস্ফুট ভাবেতিহাস রূপ পরিগ্রহ করে নূতন সৃষ্টিকর্মে, ভবিষ্যতের ভারতনির্মাণকর্মে আর সনাতন ধর্মের জগৎপ্লাবনে |


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment