Monday 25 October 2021

'যত মত, তত পথ' -- বিতর্কের মুখে রামকৃষ্ণ মিশন ...  ১





'যত মত, তত পথ' -- বিতর্কের মুখে রামকৃষ্ণ মিশন ...  ১

-----------------------------------------------------


বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের বর্বর আক্রমণের দ্বারা আজ হিন্দু সমাজ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত | বিষয়টি সকলেই অবগত আছেন | তাই তার বিবরণে এই উপস্থাপনায় আর যাচ্ছি না | হিন্দু সমাজ আজ প্রতিবাদে সরব বিশ্বের সর্বত্র | এরই মধ্যে কোনও কোনও মহলে কথা উঠছে রামকৃষ্ণ মিশনের হিন্দু সমাজ সংরক্ষণের কাজে ভূমিকা নিয়ে ও তাঁদের পালিত শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমুখনিঃসৃত বাণী 'যত মত, তত পথ'এর যাথার্থ নিয়ে, বিশেষতঃ গত ১০০ বছরের মুসলমান কর্তৃক হিন্দু গণহত্যা ও দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে |


'যত মত, তত পথ' যুগাবতার বলেছিলেন তাঁর নানা ধর্ম সাধনার পর চূড়ান্ত উপলব্ধি থেকে | সাথে সাথে তিনি এমন আরও অনেক কথাই বলেছিলেন যা 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে' লিপিবদ্ধ আছে | সেগুলি প্রণিধানযোগ্য | উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ''আধুনিক ধর্ম সব আসবে যাবে, এক সনাতন ধর্ম থাকবে | তবে একেবারে যাবে না, ওই একটু একটু থাকবে |" আবার, "ধর্ম কিছু ঈশ্বর নয় |" অথবা "মতুয়ার বুদ্ধি ভালো নয় | ... আমার ধর্মটি ঠিক আর অপরের ধর্ম ভুল, এ ভাব ভালো না | ... সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায় |" আবার বলছেন ঠাকুর, "সবাই বলে, আমার ঘড়ি ঠিক কিন্তু এক সূর্যই ঠিক চলছে |" শ্রীরামকৃষ্ণের এই উক্তিগুলি পরস্পর বিরোধী তো নয়ই, তারা একে অপরের পরিপূরক | অতএব, গোল তৈরী হয় তখন যখন স্লোগানরূপে একটি বাণীর বেশী প্রচলন হয়ে পড়ে তার ভাষাগত সংক্ষিপ্তকরণের জন্য অথবা প্রচারকর্মের রাজনীতির জন্য |


মহাপুরুষের উপলব্ধি তুরীয় স্তরের | তার প্রয়োগ যখন বাস্তব জগতে হয় তখন তার রূপ প্রায়ই পরিবর্তিত হয়ে যায় কতক, এমনই দেখা যায় | এর কারণ দুটি | এক, মহাপুরুষের বাণী তাঁর অনুগামীরা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হন না ; দুই, ব্যবহারিক পরিস্থিতি সে বাণীর পূর্ণ প্রচার, প্রয়োগ ও প্রণয়নে বাধাস্বরূপ হয়ে ওঠে সাংগঠনিক দিক দিয়ে | এ অবস্থায় সত্যের প্রতিষ্ঠানিক রূপটি আদত সত্য থেকে পৃথক হয়ে পড়ে | ফলে জনমানসে মহাপুরুষের বাণীর সত্যাসত্য বিষয়ে বিভ্রান্ত্রির সৃষ্টি হয় | 


এখন এখানে অনেকগুলি প্রশ্ন এসে যায় |

১) 'যত মত, তত পথ' -- এই বাণীটির যাথার্থ তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ও ব্যবহারিক দিক দিয়ে কতদূর ?

২) রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শগত অবস্থান কি ও তা জটিল রাজনৈতিক পরিবেশে পরিণত করা কতটা সম্ভব এবং তাঁদের ওপর সে বিষয়ে দায়ভারই বা কতটা বর্তায় ?

৩) রামকৃষ্ণ মিশন কি শুধুমাত্র একটি সন্ন্যাসী প্রতিষ্ঠান, নাকি তা সন্ন্যাসী ও গৃহীর যুগ্ম সহযোগে চলা একটি প্রতিষ্ঠান ? স্বামীজী কি চেয়েছিলেন ? ঘটনাপ্রবাহে তার কার্যত অবস্থান কি ?

৪) রামকৃষ্ণ মঠ কেন নবি দিবস পালন করেন কোনও কোনও শাখা কেন্দ্রে যেমন বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রে ? কেনই বা তাঁরা যীশুর আবির্ভাব দিবসের পূর্বসন্ধ্যা পালন করেন ? কেনই বা বুদ্ধপূর্ণিমা পালন করেন ? কি তাঁদের সর্বধর্ম সমন্বয়ের ভাব ও বার্তা এবং কেন ?


প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি | ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে | 


ক্রমশঃ 


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment