Wednesday 3 November 2021

সংগ্রাম সিংহ ... ২


সংগ্রাম সিংহ ... ২

------------------------


আমাদের হিন্দু জাতি এখনও ঘুমিয়ে আছে | বিপদ সন্নিকটে, তবু ঘুম ভাঙছে না | ১৩০০ বছরের ওপর মুসলমানকর্তৃক নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্মান্তকরণ, পরিশেষে দেশভাগ, তৎপরে সন্ত্রাস, হিন্দু দেবদেবীর বিগ্রহধ্বংস, দেবমন্দিরধ্বংস, হিন্দু নারীর শ্লীলতাহানি, বলাৎকার, হিন্দুর সম্পত্তি লুটপাট, হিন্দুর মুসলমান অধ্যুষিত দেশ, প্রদেশ, রাজ্য থেকে বলপূর্বক বহিষ্ক্রমণ ও অবাধে হিন্দুহত্যা -- এত কিছু ঘটার পরেও হিন্দুর ঘুম ভাঙছে না | এর কারণ কি ? আসুন, আজ তারই আলোচনা করি, বিশ্লেষণ করি এর মূল কারণগুলি কি ও কি উপায়ে তার প্রতিকার সম্ভব |


সনাতন ধর্মগ্রন্থগুলি উচ্চতম তত্ত্বসমষ্টির সমাহার, মানুষের সর্বোচ্চ ভাবসমূহে ভরা | কিন্তু তা সাধারণে অগম্য, তাই বাস্তবে অকৃতকার্য | এর অর্থ এই নয় যে বৈদিক তত্ত্বসমূহ কার্যে পরিণত করা সম্ভবপর নয় | তা একান্তই সম্ভব কিন্তু এযাবৎ তা ঐতিহাসিক নানা কারণে সেভাবে কার্যে পরিণত করা হয়নি | এইখানে হিন্দুসমাজের সংহতি বর্ণবিভাজনের ভিত্তিতে আভ্যতরীণভাবে সংরক্ষিত হলেও বহির্শত্রুর কাছে তা হয়নি | এক জাতি হতে কোনদিন পারেনি হিন্দু | ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিতে বিভাজিত হয়ে থেকেছে হাজার হাজার বছর ধরে | ফলে ঘোর অসংহতি দেখা গেছে বিদেশী শক্তির সাপেক্ষে বার বার | বুদ্ধপরবর্তীকালে বিদেশী শক্তিগুলিকে কখনও বা প্রতিহত করা গেছে, কখনও বা তাদের বিরাট সনাতনসমাজে একীভূত করা সম্ভব হয়েছে | কিন্তু মুহম্মদ বিন কাসিমের আরবি-ইসলামী হামলার পর তা আর সম্ভব হয়নি | সিন্ধুপতনের শোচনীয় অধ্যায় থেকে সনাতন ভারতের সাংস্কৃতিক সর্বনাশ শুরু হয়েছে | সে ধারা আজও অব্যাহত আছে আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে, বাংলাদেশে, কাশ্মীরে ও অন্যান্য মুসলমান ও খ্রীষ্ঠান অধ্যুষিত প্রদেশে | হিন্দুসংস্কৃতি বিপন্ন, হিন্দুধর্ম আক্রান্ত, হিন্দু নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিঃশেষিত | পরিত্রাণ কোথায় ?


এ তো গেল পরিস্থিতির পরিচয় | কিন্তু পরিত্রাণের উপায় কি ? উপায় আছে |


প্রথম, ইতিহাসজ্ঞান | 


দ্বিতীয়, নিজধর্মের সংক্ষিপ্তসার জানা | 


তৃতীয়, বৈরী বিদেশী ধর্মগুলির মূল সিদ্ধান্তগুলি ও তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকা | 


চতুর্থতঃ, কিছু প্রচলিত কথা ও তত্ত্ব সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা, যেমন : 

১) পাপকে ঘৃণা কোরো, পাপীকে নয় | Hate the sin, not the sinner.

২) সব ধর্মেরই সারকথা এক | তা মানুষকে ভালবাসতে শেখায় | সব ধর্মের লক্ষ্যই এক |

৩) সব ধর্মের মধ্যেই হিংসার কিছু কথা আছে মৌলবাদীরা যার অপব্যবহার করে | এগুলি ইতিহাসের পটভূমিকায় দেখতে হবে | মূলকথা, তত্ত্বগত উৎসমুখ ও পরিসংখ্যানগত ঘটনার বিবরণ, বিশ্লেষণ ও বিচার আবশ্যক |


ইতিহাসজ্ঞান

-----------------

দেশে যা অত্যাচার হিন্দু উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণের ওপর করেছে তার বিস্তারিত সংবাদ আমাদের দেওয়া হয় কিন্তু ইসলামধর্ম ও কিয়দংশে খ্রীষ্ঠধর্ম নির্বিচারে যা নির্মম অত্যাচার করেছে হিন্দুর ওপর শত শত বছর ধরে তার কোন বিবরণ বড় একটা পাই না | এ গেল ইতিহাস পড়লে পরে যা জানতে পারি বা পারিনা তার কথা | আর যাঁরা ইতিহাস পড়েন না মোটে, তাঁদের তো রাজনৈতিক ও ধার্মিক প্রবক্তারা যা বোঝাবেন তাই বুঝবেন | তাঁদের জানার শক্তি অথবা অবসরই বা কই আর বিশ্লেষণের ক্ষমতাই বা কই ? গড্ডালিকা স্রোতে তাঁরা চলেছেন, ভিন্নভাষায় হেইমলিন শহরের মূষিকের ন্যায় মৃত্যুনদীর অতলগহ্বরে |


অতএব, এহেন অবস্থা থেকে উদ্ধারের উপায় ? শিক্ষা | স্বামীজীর সেই মহৌষধি যা সমাজের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম | কিন্তু সে শিক্ষা যথার্থ শিক্ষা হওয়া চাই যার প্রথম স্তম্ভ হবে শিক্ষার্থীকে সাহসী করা, বীর, বীর্যবান, শ্রদ্ধাবান, চরিত্রবান ও আপোসহীন করা | শুধু ঈশ্বরপ্রাপ্তির আশায় শ্রীরামকৃষ্ণকথিত কান্নায় কিছু হবে না | শ্রীরামকৃষ্ণের অন্য বাণীগুলিও মানতে হবে সাথে সাথে | যেমন, ব্রহ্মচর্য, সত্যবচন, স্বার্থত্যাগ, অর্থে অনাসক্তি, তাঁর প্রিয় নরেন্দ্রের লোকশিক্ষার কথা শোনা ইত্যাদি |


শাক দিয়ে মাছ ঢাকাকে শ্রীরামকৃষ্ণ আজ শরীরে থাকলে বলতেন 'ভাবের ঘরে চুরি করা' যা তিনি করতে বারণ করে গেছেন | অতএব, খুব বড় রামকৃষ্ণভক্ত হয়ে পড়েছি, বেলুড় মঠের সাধুদের সঙ্গ করছি, ঠাকুর-মা-স্বামীজীর ভাব প্রচার করছি, এ সব আত্মপ্রতারণার দ্বারা কর্মসম্পাদন আর হবে না | যদি ও পথে এখনও অগ্রসর হন তো শীঘ্রই পরিবারপরিজনের সুরক্ষার জন্য কোনও কোনও প্রদেশ ছাড়তে বাধ্য হবেন | তখন কিন্তু ঠাকুর-মা-স্বামীজী-বেলুড় মঠ, কেউ রক্ষা করতে আসবেন না, পারবেনও না | ভুলে যাবেন না ১৬ অগস্ট, ১৯৪৬এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং (The Great Calcutta Killing) ও তৎপরবর্তী নারকীয় নোয়াখালী হত্যাকাণ্ড, হিন্দু নারীর বলাৎকার, বলপূর্বক ধর্মান্তকরণ ও পরিশেষে প্রলয়ংকর দেশভাগ | কোনও দেবদেবী, সরকার, হিন্দু ধর্মপ্রতিষ্ঠান কিন্তু সেদিন আপনাদের পূর্বপুরুষের আর্তনাদ শুনেও আপনাদের রক্ষা করতে আসেননি, পারেননি | তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ | নচেৎ, বিনাশ অবশ্যম্ভাবী |


ইতিহাস জানা আবশ্যক | এর জন্য উপযুক্ত শিক্ষাপ্রণালী, পদ্ধতি, প্রচারমাধ্যম ও পরিকাঠামো প্রয়োজন | বহুজাতি, বহুভাষাভাষি, বহুধর্মবিশিষ্ট ভারতভূখণ্ডে এই সত্যোদ্ঘাটন বড় সহজ ব্যাপার নয় | পদে পদে বাধা পেতে হবে কিন্তু আজ বহু গণমাধ্যমের যুগে এই সত্যের প্রচার সাংগঠনিকভাবে সম্ভব যদি হিন্দুর এ বিষয়ে সদিচ্ছা থাকে |


দ্বিতীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি | ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে |


ক্রমশঃ


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment