Monday 15 November 2021

কত রঙ্গ দেখালি মা !


কত রঙ্গ দেখালি মা !

----------------------------


যতদিন পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তারূপ বিশেষ এক কল্পিত ব্যক্তিসত্তার ও তাঁর পার্থিব প্রতিনিধির বর্বর দমননীতি বলবতী থাকবে, ততদিন ধর্মীয় শান্তি অসম্ভব এ জগতে | এঁদের নির্বাসনেই মানুষের মুক্তি | নচেৎ, বৃথা আন্তর্ধর্ম সম্মেলন, অর্থহীন আংশিক আলোচনা এঁদের সম্বন্ধে | সত্যভাষণের ক্ষমতা যদি না থাকে তো সর্বসমক্ষে মিথ্যাভাষণ করে আন্তর্ধর্ম সম্মেলনে নাই বা মানুষের কপট মনোরঞ্জন করলেন |


অমানবিক শাস্ত্র কখনও মানুষের নীতিগ্রন্থ হতে পারে না | তার বর্জনেই কল্যাণ | মিথ্যা তত্ত্বের পালনে না স্বর্গে যাবেন, না নরকে | শুধু পৃথিবীর অমৃতজীবনকে গরলে পরিণত করবেন | করছেনও তাই | শুধু নিজের নয়, অপরেরও | এ সব ত্যাগ করে বিজ্ঞানমনস্ক হন | বিজ্ঞান ও বেদান্ত -- এই দুইয়ের সমন্বয়ে বহির্জীবন ও অন্তর্জীবন গড়ে তুলুন | এতেই কল্যাণ |


যিনি সাধু, তিনি নির্ভিক | যিনি সাধু, তিন সত্যবাদী | যিনি সাধু, তিনি রণে ভঙ্গ দেন না শিষ্যশিষ্যাদের ফেলে নাৎসীদের কবলে | তিনি হঠাৎ ঠাকুরের আদেশ পান না বিপৎসংকুল স্থান ত্যাগ করে যেতে অসহায় আশ্রিতদের বর্বর নরপশুদের হাতে ফেলে | যদি যান তাহলে তিনি কেমন সাধু, কেমন সিদ্ধপুরুষ ? আর কেমনই বা সে ভগবান যিনি তাঁর একটি ত্যাগী সন্তানকে বাঁচাতে উদ্যোগী হন লক্ষ মানুষ ফেলে ? কোথা ধর্ম ? কোথা ভগবান ?


যদি মানুষই সব করবে তো ভগবান নিয়ে বৃথা পণ্ডশ্রম কেন ? যদি বিরজাহোমের পরও নাৎসীর ভয়ে পালাতে হয়, কমিউনিস্টের অত্যাচারে স্বধর্ম ত্যাগ করতে হয়, ইসলামী হামলাকারীর প্রকোপে আশ্রম গুটিয়ে দেশে ফিরতে হয়, আত্মা হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের পক্ষে দাঁড়িয়ে সত্যপ্রতিষ্ঠা করার সাহস না জাগে, তো বীর ক্ষত্রিয়ের ধর্মই শ্রেয়ঃ |


শাক দিয়ে মাছ যতই ঢাকুন, আঁশটানি গন্ধ মারবেন কি করে ? চালাকির দ্বারা কি মহৎ কার্য হয় ? এ কথা তো বীর সন্ন্যাসীরই | যতই ফুল ছড়ান, মৃতদেহ পচবেই | ফুলও পচবে সাথে সাথে | এও তো ঐ নেতারই কথা | তাহলে ? কি হবে ভান করে যে সব ধর্মই আধ্যাত্মিক সত্যলাভের পথ ? সত্যিই কি তাই ? সে সব ধর্ম কি বলে যারা সনাতন ধর্মের পৌরানিক ধারাটির সর্বনাশ চায় ? আপনারা যাঁর জন্মদিনে ভোগনিবেদনরূপ যজ্ঞ করেন, তিনি তো আপনাদের পৌত্তলিক, নিধনযোগ্য মনে করেন | এটি কি আন্তর্ধর্ম সম্মেলনে বেশ জোড় গলায় বলেন ? অংশরূপে নয়, পূর্ণরূপে ?


আহা, ভক্তদেরও বলিহারি ! কি ভক্তিটাই না তাঁদের স্বধর্মের প্রতি ! হিন্দু মরে ঘরে ঘরে, মরুক ! কি আর করার আছে ? সবই ভায়া, বুঝেছ, কর্মফল | এত পাপ করেছিল পূর্ব পূর্ব জন্মে, যাবে কোথা ? খেয়েছে মার বিধাতার | পাপে করলে ফল তো পাবেই | তাতে আমাদের আর কি করার আছে ? যার যার, তার তার | আর তুমি বলছ হিঁদুর ধর্ম শেষ হয়ে যাবে আমরা রুখে না দাঁড়ালে ? বল কি ভায়া ? ওটি হবার নয় | সনাতন ধর্ম বলে কথা | কত এলো আর কত গেল ! কিছু করতে পারল সনাতন ধর্মের ? আজও টিকে আছে | চিরকাল থাকবে | ও নিয়ে তুমি ভেবো না | যার মরার, সে মরবেই | বিধির বিধান ! সনাতন ধর্ম তো এই কথাই বলে |


বিস্ফারিত নেত্রে বিবেকনন্দ হতবাক | তারপরই বজ্রবিকম্পিত কন্ঠে ধ্বনিত হল আর্তপীড়িতের তরে ব্রহ্মবাণী | সে বাণী আজও বাজছে কানে | শুধু সুর কেটে গেছে | তাই মূর্ছা গেছে মূর্ছনা |


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment