Tuesday 30 November 2021

সংগ্রাম সিংহ ... ৮


সংগ্রাম সিংহ ... ৮


🕉 হিন্দুর সবচেয়ে বড় শত্রু হিন্দু নিজে | তার নিজধর্ম সম্বন্ধে অজ্ঞতা, জানার অনিচ্ছা এবং ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা তার বিনাশের অন্যতম কারণ এযাবৎ | এ থেকে উদ্ধারের উপায় কি ? শিক্ষা | 


চরিত্র গঠনের মূল উপাদান হল সাহসিকতাসহায়ে একনিষ্ঠ সাধনা, বিদ্যালাভের জন্য পরিশ্রম করা | 


মনুষ্যশরীরে শ্রমের দ্বারাই ক্রমবিকাশ, এটি মনে রাখতে হবে | In the human body to labour is to evolve -- this must be remembered.


সৎসাহস -- এইটি বড় জিনিস | অনেক শুনি ভক্তির কথা, সাধুদের শাস্ত্রবচন | কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কাপুরুষতাই দেখতে পাই অরাজনৈতিকতার আড়ালে আশ্রয় নিয়ে | পৃথিবী রসাতলে যাচ্ছে, কোটি কোটি মানুষের সর্বনাশসাধন হচ্ছে, তাতে কিই বা আসে যায় ? ভক্তপরিমণ্ডলের দ্বারা আবৃত রইলাম আর আমেরিকার শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বিত্তাসনে বসে ব্রহ্মবাণী দিলাম, তাহলেই ঠাকুরের কাজ করা হল, জগৎ উদ্ধার হল | এই না হলে আত্মশ্রাদ্ধসমাপনকারি সন্ন্যাসী ? এই না হলে 'বহুরূপে সম্মুখে তোমার' সাধনকারি ভক্ত ? ঠাকুর, এঁরা তোমার শ্রাদ্ধশান্তি ভালই করেছেন | তোমার বৈকুন্ঠে খুশী থাকার কথা | কি বল ?


শিক্ষার প্রয়োজন | এমন শিক্ষা যার প্রথম, মধ্যম ও শেষ সূত্রটি হল সত্যাশ্রয়ী হওয়া ও কর্মে রূপায়িত করা প্রতিটি ব্রহ্মবাণী | উপদেশ দেওয়া সহজ কিন্তু তা অনুযায়ী নিজজীবন চালনা করা কঠিন |


আমরা প্রায়ই শুনি যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বামপন্থীদের হাতে চলে গেছে | তাঁরাই নির্ধারণ করছেন কি পাঠ্য হবে না হবে | দক্ষিণপন্থীদের নাকি তাতে কোনও হাত নেই | তাই নাকি ভুল ইতিহাস পড়ানো হয়েছে এতকাল ও এখনও হচ্ছে দেশের অগণিত ছেলেমেয়েদের | এর জন্য নাকি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুই মুখ্যতঃ দায়ী কারণ তিনি নিজে ছিলেন বামপন্থী | কিন্তু বামপন্থীদের হাতে শিক্ষার ভার চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ কি ? তা হল তাঁদের অধ্যয়ণে উৎসাহ, নিজেদের সুশিক্ষিত করার অক্লান্ত প্রয়াস যার ফলস্বরূপ তাঁরা হাতে তূণীর পান অন্যকে পরাভূত করার, যুক্তিবুদ্ধিতথ্যসহায়ে | অতএব, তাঁদের হাত থেকে শিক্ষার ভার নিজহস্তে নিতে গেলে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে |


শিক্ষাই শক্তি | বামপন্থীদের থেকে অধিক শিক্ষিত, সংস্কৃত হ'ন, সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করুন, ইতিহাসসচেতন হ'ন, গভীর জ্ঞানলাভ করুন সর্ববিষয়ে, বৌদ্ধিক-চৈতন্যের স্তরে বিবেকনন্দ, শংকরাচার্য, শ্রীকৃষ্ণ হ'ন, সমস্ত হাতে চলে আসবে | দেশের মানুষ আপনাদের কথাই শুনবেন তখন |


বিলাপ নয়, শিক্ষা ব্যক্তিগত স্তরে চাই এখন | তবেই তা কালক্রমে সমাজগত হবে, নিশ্চিত জানুন | এবং যত শীঘ্র আপনি প্রস্তুত হবেন, তত শীঘ্রই আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হবে | ব্যক্তিশিক্ষাই মহৌষধি এই মুহূর্তে |


স্বামীজী ঋষি হতে বলেছিলেন আমাদের | তাঁর প্রতিটি কথাই দ্বিধারযুক্ত তরবারি, ব্যষ্টি ও সমষ্টি, ব্যক্তি ও সমাজ, উভয়ের জন্যই সমভাবে উপযোগী | তাঁর এই আবাহনের অর্থ ছিল মানুষকে প্রজ্ঞায়, চারিত্রমাহাত্ম্যে শক্তিশালী করা যার অনিবার্য ফল সমাজের শক্তিলাভ | 


ঋষি হওয়া, অর্থাৎ, পূর্ণজ্ঞানী হওয়া | তাহলে স্পষ্টই পরিস্ফুট যে শিক্ষার মাধ্যমেই ভারতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উত্থান সম্ভব | এ ছাড়া তো দ্বিতীয় পথ নেই | তাই স্বামীজী বলেছিলেন, জগতে এমন কোনও সমস্যা নেই শিক্ষারূপ মহৌষধি দ্বারা যার সমাধান হয় না | বিশ্বপ্রকৃতির এই মায়িক খেলার হয়ত এইটিই মূল বিধান, মূল সূত্র -- 'এই সমস্যারূপ প্রকৃতি সামনে রইল বিরাট ধাঁধার ন্যায় ; এখন ধাঁধা সমাধান করো তার অন্তরেই নিহীত সমাধানটি খুঁজে |'


আসুন সেই সমাধানটি খুঁজি শিক্ষাসহায়ে | এই শিক্ষা বহিরাঙ্গীণ, এই শিক্ষা আভ্যন্তরীণ | বিজ্ঞান ও বেদান্ত, এই দুইয়ের যুগ্মসহযোগে আসুন স্বীয় জীবন গঠন করি, স্বদেশসেবা করি, স্বধর্ম রক্ষা করি | 🕉 


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment