' তৃণাদপি সুনীচেন '
--------------------------
মাঠের মধ্য দিয়ে চলার পথ রয়েছে | পথচারী সমানে সেই পথ বেয়ে হেঁটে চলেছেন, বিশেষত, ভোর ও বিকেলের দিকে | উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্যোদ্ধার | প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যভ্রমণ অতি উত্তম উপায় সুস্বাস্থ্য রক্ষার | ডাক্তারবাবু তো তাই বললেন, কি বলেন দাদা ? আপনিও তো রোজই আসেন এই পার্কে | সকলেই একমত, বাঁচতে চাও ভালভাবে, তো হাঁটো | এ অভ্যাসের ভায়া আর জুড়ি নেই |
কিন্তু পথের ধারে ওই মেঠো অংশটি কি বলে যে বহুবছর ধরে তার একক নিরলস সাধনায় রত ? পিচের রাস্তার একপাশে ওর বাস | অনেক বছর হল পথচারীরা ওকে মাড়িয়ে যায় চলার পথে বাঁক নেওয়ার মুখে | কেন যে ঠিক ওই বাঁকটার মুখেই তারা পিচ ছেড়ে মাঠের ওই অংশটুকুতে নেমে পড়েন ভেবে পায় না সে | এতে যে সে কিছুতেই তার সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারছে না আজ বেশ কয়েক বছর, যবে থেকে আধিকারিকরা এই প্রাতঃভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মানুষজনের জন্য | ওই অংশটুকু মাড়িয়ে যাবেনই পথচারীরা যদিও ওটি তাঁদের পথচলার সীমানার বাইরে |
একদিন বেচারা সাহস করে জিজ্ঞাসা করেই বসল |
" বাবুরা, ভায়েরা, মায়েরা,
একটি আর্জি ছিল | আচ্ছা, আপনাদের পথচলার জন্য তো সরকার বাহাদুর পিচের কেমন সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন আমার বুক কেটে | তৎসত্ত্বেও আমার এই কোনটুকু মাড়িয়ে যান কেন বাবুরা ? এতে যে আমার কটি ছেলেমেয়ে জন্মেই মরে যায় আর বাকিরা গর্ভেই মরে | তারা যে পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না, বাবুরা | "
" ও বাবা, এ বলে কি হে ? আমরা কত পরিশ্রম করে হাঁটি | যত গুলো রাউণ্ড মারব যত কম সময়ে, ততই ভাল | After all, we need to do brisk walking. সেই জন্যই তো পথটুকু একটু খাটো করে নি যাতে বেশী রাউণ্ড মারতে পারি | বাবা, স্বাস্থ্যটি তো ঠিকঠাক রাখা চাই, কি বলেন সব ? তা, বাপু, তোমার আবার ছেলেপিলে ? কি ব্যাপার বল তো ? "
" বাবু, আমার ছেলেমেয়েদের সবার একটিই নাম রেখেছি | ভাল নাম ' তৃণ ' যদিও ডাকি ওদের ' ঘাস ' বলে | ওদের ভাইবোনেরা তো, বাবু, সারা মাঠ জুড়ে | ভালোই আছে | শুধু এদেরই কপালদোষ, পড়েছে এই কোনায়, একেবারে আপনাদের চরণতলে | "
" তা, কি করতে বল আমাদের ? "
" আজ্ঞে, যদি একটু সরে হাঁটতেন ওই নির্ধারিত পিচের পথ দিয়ে তো বেশ হত | এই বর্ষায় ওরা সব জন্ম নিত আর বেশ হেসে খেলে বড় হত | যদি কৃপা করেন, বাবুরা | "
" না, বাপু, এ তোমার অন্যায় আবদার, পথ ছাড়া চলবে না | "
আর এক বর্ষা এলো, আর এক বর্ষা গেল | মাড়িয়েই চলল মানুষ ওই কোনটুকু, ঘাস আর গজালো না | পদদলিত, পদদলিতই রইল | তার আর মনুষ্যত্বের মুখ দেখা হল না | সকল সম্ভাবনা বিজাকারে বিনষ্ট হল | নিষ্ফলা ওই কোনটুকুর আর্তি কেউ শুনল না | কিন্তু তার নিরলস সাধনা অব্যাহত রইল | কোন এক বরষণমুখর দিনে হয়ত হঠাৎ জেগে উঠবে সম্ভাবনার বীজ নবজন্মের প্রথম আলোকস্পর্শে |
রচয়িতা : সুগত বোস (Sugata Bose)
--------------------------
মাঠের মধ্য দিয়ে চলার পথ রয়েছে | পথচারী সমানে সেই পথ বেয়ে হেঁটে চলেছেন, বিশেষত, ভোর ও বিকেলের দিকে | উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্যোদ্ধার | প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যভ্রমণ অতি উত্তম উপায় সুস্বাস্থ্য রক্ষার | ডাক্তারবাবু তো তাই বললেন, কি বলেন দাদা ? আপনিও তো রোজই আসেন এই পার্কে | সকলেই একমত, বাঁচতে চাও ভালভাবে, তো হাঁটো | এ অভ্যাসের ভায়া আর জুড়ি নেই |
কিন্তু পথের ধারে ওই মেঠো অংশটি কি বলে যে বহুবছর ধরে তার একক নিরলস সাধনায় রত ? পিচের রাস্তার একপাশে ওর বাস | অনেক বছর হল পথচারীরা ওকে মাড়িয়ে যায় চলার পথে বাঁক নেওয়ার মুখে | কেন যে ঠিক ওই বাঁকটার মুখেই তারা পিচ ছেড়ে মাঠের ওই অংশটুকুতে নেমে পড়েন ভেবে পায় না সে | এতে যে সে কিছুতেই তার সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারছে না আজ বেশ কয়েক বছর, যবে থেকে আধিকারিকরা এই প্রাতঃভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মানুষজনের জন্য | ওই অংশটুকু মাড়িয়ে যাবেনই পথচারীরা যদিও ওটি তাঁদের পথচলার সীমানার বাইরে |
একদিন বেচারা সাহস করে জিজ্ঞাসা করেই বসল |
" বাবুরা, ভায়েরা, মায়েরা,
একটি আর্জি ছিল | আচ্ছা, আপনাদের পথচলার জন্য তো সরকার বাহাদুর পিচের কেমন সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন আমার বুক কেটে | তৎসত্ত্বেও আমার এই কোনটুকু মাড়িয়ে যান কেন বাবুরা ? এতে যে আমার কটি ছেলেমেয়ে জন্মেই মরে যায় আর বাকিরা গর্ভেই মরে | তারা যে পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না, বাবুরা | "
" ও বাবা, এ বলে কি হে ? আমরা কত পরিশ্রম করে হাঁটি | যত গুলো রাউণ্ড মারব যত কম সময়ে, ততই ভাল | After all, we need to do brisk walking. সেই জন্যই তো পথটুকু একটু খাটো করে নি যাতে বেশী রাউণ্ড মারতে পারি | বাবা, স্বাস্থ্যটি তো ঠিকঠাক রাখা চাই, কি বলেন সব ? তা, বাপু, তোমার আবার ছেলেপিলে ? কি ব্যাপার বল তো ? "
" বাবু, আমার ছেলেমেয়েদের সবার একটিই নাম রেখেছি | ভাল নাম ' তৃণ ' যদিও ডাকি ওদের ' ঘাস ' বলে | ওদের ভাইবোনেরা তো, বাবু, সারা মাঠ জুড়ে | ভালোই আছে | শুধু এদেরই কপালদোষ, পড়েছে এই কোনায়, একেবারে আপনাদের চরণতলে | "
" তা, কি করতে বল আমাদের ? "
" আজ্ঞে, যদি একটু সরে হাঁটতেন ওই নির্ধারিত পিচের পথ দিয়ে তো বেশ হত | এই বর্ষায় ওরা সব জন্ম নিত আর বেশ হেসে খেলে বড় হত | যদি কৃপা করেন, বাবুরা | "
" না, বাপু, এ তোমার অন্যায় আবদার, পথ ছাড়া চলবে না | "
আর এক বর্ষা এলো, আর এক বর্ষা গেল | মাড়িয়েই চলল মানুষ ওই কোনটুকু, ঘাস আর গজালো না | পদদলিত, পদদলিতই রইল | তার আর মনুষ্যত্বের মুখ দেখা হল না | সকল সম্ভাবনা বিজাকারে বিনষ্ট হল | নিষ্ফলা ওই কোনটুকুর আর্তি কেউ শুনল না | কিন্তু তার নিরলস সাধনা অব্যাহত রইল | কোন এক বরষণমুখর দিনে হয়ত হঠাৎ জেগে উঠবে সম্ভাবনার বীজ নবজন্মের প্রথম আলোকস্পর্শে |
রচয়িতা : সুগত বোস (Sugata Bose)
No comments:
Post a Comment