Thursday 27 September 2018

'জয় গুরু!'


'জয় গুরু!'

সবাই চায় গুরু হতে,
কেউ হবে না শিষ্য |
তাইত গুরুর ছড়াছড়ি,
শিষ্যরা সব নিঃস্ব |

কেউ বা আবার বদগুরু,
নাম নিয়ছে সদ |
কেউ বা চাঁদের অমাবস্যা,
রবির কিরণ রদ |

কেউ বা বাপু, কেউ শ্রীশ্রী,
কেই মাতা, কেউ সাঁই,
কেউ ভগবান, কেউ অবতার,
কেউ তো ভক্ত নাই ?

এক যে ছিল পরমহংস,
তার নেইকো জুড়িজাড়ি |
কর্তা, বাবা, গুরু বললে
গুটোতো পাততাড়ি |

তার সে চেলা, বিবেকভায়া,
মস্ত বড় ঋষি |
বলে, দেখব গিয়ে কালীর খোকা
পাগলা বামুন দিশী |

আমি হলাম মিল, স্পেন্সর,
হ্যামিলটনের সাধক,
জানে কি ওই বৃদ্ধবামুন
এ নরেন সিমলেপাড়ার বাদক?

পারে যদি জবাব দিতে,
ওটা বাঁচবে তাহলে |
না পারলে বাছাধনের
কানটি দিব মলে |

শুনেছি, জানে ওটা ব্রহ্মতত্ত্ব,
শিখে নেব তাই |
এর বেশী আর কিই বা দেবে ?
ওর কিছুই তো জানা নাই |

এইটি ভেবে বাবু নরেন
দিলেন কালীধামে পারি |
দেখি কেমনতর পরমহংস,
ও তার কোন প্রদেশে বাড়ী |

পশ্চিমের ওই দরজা দিয়ে
অালুথালু বেশে,
কার খোঁজেতে আত্মস্থ,
এলো নরেন শেষে |

আচম্বিতে প্রশ্ন হানে,
"মশায়, দেখেছেন ঈশ্বর ?"
মুচকী হেসে ঠাকুর কহেন,
"তোকেও দেখাব এরপর |"

এই না বলে, ঘরের পারে
দখিণ বারান্দায়,
নিলেন ঠাকুর হাতটি ধরে
অসীম করুণায় |

''বাছা, এতদিন পর এলে?
জানি তুমি নরঋষি, নরনারায়ণ,
জীবের দুঃখে এসেছ মর্তে
করিবারে নিবারণ |"

পাগল ঠাকুর কাঁদে |
নিজের হাতে খাওয়ায় মিঠাই,
নরেন পড়ে ফাঁদে |
বলে, "যাই, ঘরে যাই |"

"মিঠাইগুলো দিন তো হাতে,
বন্ধুসমেত খাই |"
"আরে, ওদের জন্য রাখা আছে,
তোর ভাবনা কোনো নাই |"

নরেন ভাবে মনে |
একি পাগল দেখতে এলাম, সপ্তঋষি কয়?
এবার পেলে ছাড়া অার
এদিকপানে নয় |

পাগল ঠাকুর ঘরে ফিরে
সহজ হলেন তায়,
ভাবের গতিক একটুও নয়
চরম সীমানায় |

নরেন ফেরে ঘরে |
মগজটা যে গুলিয়েছে তার
পরমহংসের তরে |
এখন মাথায় বড় ভার |

এই ভেবে সে একক এবার
হংসপথে যায়,
মনের ধন্দ নিরসনের
এবার অভিপ্রায় |

হাঁটতে হাঁটতে বেলা গড়ায়,
গলদঘর্ম কায় |
পথ হারিয়ে আসে শেষে
পরমহংসের পায়ে |

এবার মজার খেলা শুরু |
এবার বুঝি ঠিক হবে
কে শিষ্য কে বা গুরু |
বাবাজীবন, এই তো শুরু সবে |

হঠাৎ ঠাকুর দিলেন ছুঁয়ে,
সব শূণ্যে মিলায় একি ?
দিগ্বিদিক যে বিলয় হল
মরছি যে হায় দেখি !

ওগো তুমি করো একি,
বাপ মা আছে ভাই |
পাগল ঠাকুর হেসে বলেন,
তবে এখন আর কাজ নাই |

দিলেন হাত বুলিয়ে বুকে |
যেমন সব ছিলো আগে,
তেমনি আছে সুখে |
নরেন সাম্ভবিরূপ জাগে |

এবার তৃতীয় অবস্থান |
নরেন লয়ে ঠাকুর চলেন
যদুর বাটি বাগান |
সম্মোহনে বলেন,

বল দেখি তুই কোথায় ছিলি
কোন মুলুকে ঘর ?
কেনই বা তায় হেথায় এলি
কি করবি অতঃপর ?

রইবি কদিন মর্তধামে,
ফিরবি কবে বল ?
সঠিক সবের জবাব দিল
বিগ্রহ অচল |

নরেন, ও তার ইন্দ্রীয় বিকল |
হেদোর গেটে মাথা ঠোকে,
বলে, "ব্রহ্ম কি তুই, বল ?"
অবাক হল লোকে !

এই ভাবেতেই চলল কয়েক
মাসের ঠিকানা,
যুক্তি গেল তলিয়ে,
ও যে হংসনিশানা |

পরমহংসের সমাধি হয়,
ভাবল ফিটের ব্যামো |
তাইতো শিবে বেহেড বলে,
বলে, বাস্তবেতে নামো |

সেই সমাজে নরেনবাবু
করেন যাতায়াত,
কন্ঠ মধুর, ব্রহ্মগানে
আসর করেন মাত |

এবার পরমহংসের পালা --
খণ্ডবুদ্ধি নরেন
হল মস্ত বড় জ্বালা |
বলে মশাই, কোন ভাবে কি করেন ?

বলে, মনটা তোমার ভুলো
সব দেখেছে ভুল |
তাই তো এবার বিচার করে
করব তা নির্মূল |

হয় কি প্রভু মাটির পুতুল ?
তাই কখনো হয় ?
ও সব তোমার মাথার খেয়াল,
জানিও নিশ্চয় |

ওরে লরেন, মাটি কি রে ?
মা যে চিন্ময় |
লড়েন, চড়েন, কথা করেন,
তাই তো অমন হয় |

না, না, মশাই, ও কিছু নয়,
ও সব মনের যত ভুল |
স্নায়ুর চাপে আছেন,
ও তাই ভ্রান্তি সমতুল |

ঠাকুর গেলেন কালীঘরে |
মা, লরেন তো সত্য কথা কয় |
তবে কি মা জীবনভোর ভুল দেখলাম,
এই কি পরিচয় ?

না রে না, ও ছেলেমানুষ,
কি বা বোঝে ও ?
মানবে সবই সময় হলে,
সত্য খোঁজে ও |

তাই শুনে ঠাকুর,
স্বস্তি ফেলেন শেষে |
বলেন, শালা কথা তোর আর
মানব না নিমেষে |

নরেন তবু ছাড়ে না তার
পরিক্ষকের পালা,
রাখল টাকা তোশকতলে,
দেখবে ধাতুর জ্বালা |

পরমহংস জানে না তার
তোশকতলে কি,
বসেই খাটে উঠল জ্বলে
অতি শুদ্ধ তনুটি |

বলেন, এ শালা ওই নরেনের কাজ,
বাজিয়ে নিতে চায় |
টেস্টো করবে নানান ভাবে,
মানবে তবে তায় |

No comments:

Post a Comment