Thursday, 16 July 2020

একদিন কাশীধামে


একদিন কাশীধামে
-------------------------

এই মহাপুরুষ কিশোর সুভাষচন্দ্রকে কৃপা করেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন কাশী সেবাশ্রমে, যখন অধ্যাত্ম পিপাসায় উত্তাল সুভাষ হিমালয়ে গুরুর সন্ধানে তীর্থে তীর্থে ইতস্তত ভ্রমণ করে পরিশেষে বিফলকাম হয়ে শিবক্ষেত্র কাশীধামে এসে পৌঁছোন । স্বামী ব্রহ্মানন্দ সেদিন সাদরে কাছে ডেকে নেন প্রতিভাবান কিশোরকে ও আশীর্বাদপূর্বক সস্নেহে গৃহে ফিরে যেতে আহ্বান করেন । বলেন, " সন্ন্যাসের পথ তোমার নয় । দেশসেবার কন্টকাকীর্ণ পথ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে । "

ঋষির এই ভবিষ্যদ্বাণী অচিরেই ফলবতী হয়ে ওঠে সুভাষচন্দ্রের জীবনে কিন্তু সেদিন তিনি তার সম্যক তাৎপর্য উপলব্ধি করে উঠতে পারেননি । দেশসেবা যে স্বাধীনতার জীবনক্ষয়ী সংগ্রাম, তা কিশোরের ছিল অজ্ঞাত । তিনি রাজা মহারাজের কাছে বৈরাগ্যে দীক্ষিত হয়ে রামকৃষ্ণ মিশনে যোগদান করার ইচ্ছা জ্ঞাপন করেন বলে শ্রুত আছে । কিন্তু প্রাজ্ঞ মহামানব সেদিন তাঁকে এ অভিপ্রায় হতে নিরস্ত করেন ও তাঁকে গৃহে ফিরে যেতে বলেন ।

সুভাষচন্দ্রের পিতৃদেব শ্রীযুক্ত জানকীনাথ বসু ছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দের বিশেষ পরিচিত ও স্নেহধন্য । তাই পরবর্তীকালে যখন রাজনেতা সুভাষচন্দ্রকে প্রশ্ন করেন তাঁরই সহকারাবাসী সতীর্থ যে সেদিন রাজা মহারাজ তাঁর পিতার কথা স্মরণ করেই তাঁকে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে বলেছিলেন নাকি ক্রান্তদর্শী ঋষি তাঁর ভাবীজীবনের কথা পরিজ্ঞাত হয়েই তাঁকে গৃহে ফিরতে বলেছিলেন, সুভাষচন্দ্র তখন অশ্রুসজল নয়নে ভাববিহ্বল হয়ে বলেন, " সেই জানে কৃপার অর্থ যে কৃপা পেয়েছে । না, হয়ত উভয় কারণেই রাখাল মহারাজ আমায় বাড়ী ফিরতে বলেন । "

রাজা মহারাজের কাছে সমস্ত ভারতবর্ষ, সমগ্র মানবজাতি কৃতজ্ঞ, তিনি তাঁর কৃপাকটাক্ষে সুভাষচন্দ্রকে ভবিষ্যতের নেতাজীতে রূপান্তরিত করেন । ধন্য শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র ! ধন্য তাঁর কৃপালব্ধ কিশোর সুভাষচন্দ্র !

রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment