Wednesday 20 November 2019

হিন্দু নবজাগরণ ... ২


হিন্দু নবজাগরণ ... ২

অপর্যাপ্ত অর্থোপার্জন ত্যাগ করবেন কেন ? অর্থের প্রতি আসক্তি ত্যাগ করুন | এই শুনে থাকি ধর্মগুরুদের কাছে | কিন্তু দ্রব্যগুণ তো আছে | মুখে বিষ রেখে যদি বলা হয় যে বিষের প্রতি আসক্তি ত্যাগ করেছি, তো প্রাণটিতো যাবে, যাবে কিনা ?

এর নাম সঙ্গগুণ অথবা সঙ্গদোষ, যে নামই দিন ইচ্ছামত | তাই শুধু চালাকি করে আসক্তি ত্যাগের ভান করলে হবে না | আসক্তির বস্তুটিকেও ত্যাগ করা চাই | নইলেই আসক্তি এসে পড়বে | দ্রব্যটি দূরে থাকলে তার অপগুণ হতে নিস্তার পাওয়া যাবে, নচেৎ নয় | এই কারণেই সাধুসঙ্গ করার শাস্ত্রবিধান, সাধুতাসঙ্গ নয় | একইভাবে অধ্যাত্মপিপাসু পুরুষের পক্ষে নারীসঙ্গ বর্জনীয় ও অধ্যাত্মপিয়াসী স্ত্রীলোকের পক্ষে পুরুষসঙ্গ ত্যাগ একান্ত আবশ্যক | তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর পুরুষ ভক্তদের কামিনীকাঞ্চণ ত্যাগ করতে বলতেন, কামকাঞ্চণ নয়, যেমনটি পরবর্তিকালে স্বামীজী তাঁর মহাপ্রাণতায় নারীজাতির প্রতি বিশেষ সম্মাণ প্রদর্শনহেতু বলে থাকতেন |

এই বিষয়টি আমেরিকাতেও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা পরিষ্কারভাবে বলতে কুন্ঠা বোধ করেন অথচ এটি ঠাকুরের প্রায় মূলমন্ত্র ও তাঁর ভাবান্দলনে ব্রহ্মচর্যের ভিত্তিভূমি | অবশ্য, ঠাকুর একইভবে নারীভক্তদেরও পুরুষসঙ্গ বিবর্জন করতে উপদেশ দিতেন |

আর বলে রাখা কর্তব্য যে ঠাকুর কিন্তু নারীজাতিকে মাতৃজ্ঞানে সর্বদা বিশেষ পূজা করতেন ও তাঁর পুরুষ ভক্তদের নারীজাতিকে সেই চোখেই দেখতে বলতেন | তাদের থেকে অন্তরে থাকতে বলতেন কিন্তু সর্বদা দূর থেকে তাদের প্রতি মাতৃজ্ঞানে পূজার ভাব রক্ষা করতেই উপদেশ দিতেন |

পরিশেষে তাই পুনরোল্লেখ করি | আসক্তিত্যাগ করতে হলে ভোগ্যবস্তুটির থেকে দূরে থাকতে হবে কারণ দ্রব্যদোষ আছেই | সুস্বাদু ভোজ্যবস্তু দেখলেই জিহ্বায় জল আসে | স্নায়বিক প্রক্রিয়া এমনই | এতে উভয়লিঙ্গের কারোরই কোন দোষের কিছু নেই, এ জীবের সহজাত প্রবৃত্তি যার দমনই যোগের উপায় |

রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment