Thursday, 24 July 2025

উত্তিষ্ঠত ! জাগ্রত ! ... ১১ (প্রাতঃপ্রকাশ, ২৫ জুলাই, ২০২৫)





উত্তিষ্ঠত ! জাগ্রত ! ... ১১

(প্রাতঃপ্রকাশ, ২৫ জুলাই, ২০২৫)

♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧


সম্পাদকীয় 

♧♧♧♧♧♧


রামকৃষ্ণ মিশনের বাইরে আজ ঠাকুর-মা-স্বামীজীর দ্বারা অনুপ্রাণিত অনেক ছোট ছোট সন্ন্যাসী প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে | এমনই এক প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আজ দূরভাষযোগে কথা হল | কত আগ্রহ নিয়ে ফোন করে ছিলাম YouTubeএর videoতে দেওয়া ফোন নম্বরে | কিন্তু যা উদ্ধত ব্যবহার পেলাম তা দেখে মর্মাহত হলাম | কথা বলার কী ধরণ ! যেন বাচ্চা ছেলের প্রতি প্রৌঢ় হেডমাস্টারের ব্যবহার | অথচ, এই সাধুটির বয়স ৪০এর ঘরে বড়জোর আর আমার ৬০এর ঘরে | এর কারণ অবশ্য ভক্তরাই | তাঁরাই এঁদের বাড়িয়ে তোলেন অত্যধিক স্তবস্তুতি করে, অর্থাৎ, 'মহারাজ', 'মহারাজ' করে | স্বামীজী এটা মোটেই পছন্দ করতেন না | তিনি বলেছিলেন, "ইংরেজরা আদেশ পালনের সমস্যাটা সুন্দর সমাধান করেছে | উচ্চ পদাধিকারীর আদেশ নিম্ন পদাধিকারী পালন করে কিন্তু তা করতে গিয়ে দাসসুলভ আচরণ করে না |" স্বামীজী এও বলেছিলেন, "ভারতবর্ষে সন্ন্যাসীর মান এত বেশি যে একজন রাজা পর্যন্ত সিংহাসন থেকে উঠে পড়েন তাঁকে সম্মান দিতে | গেরুয়ার এতটা আধিপত্য ভাল নয় |" ঠাকুর-মা-স্বামীজী মানুষকে মান দিয়েছেন, সেবা করার নামে অসম্মান, অপমান করেন নি | এতে তো ভাবপ্রচার এগোয় না | 


স্বামী যতীশ্বরানন্দজী ছিলেন---আপনারা অনেকেই জানেন---রাজা মহারাজের, অর্থাৎ, স্বামী ব্রহ্মানন্দের মন্ত্রশিষ্য, বহুবিদগ্ধ মহাপুরুষ, ইয়োরোপ-আমেরিকায় দীর্ঘকাল বেদান্ত প্রচাররত নিত্য গুরুদ্রষ্টা যতী---তাঁকে তাঁর গুরু আশীর্বাদ করেছিলেন যে তিনি রোজ সন্ধ্যারতির সময় তাঁর গুরুর (স্বামী ব্রহ্মানন্দের) দর্শন পাবেন---, শেষে মঠমিশনের সহসংঘাধ্যক্ষ ও দীক্ষাপ্রদানকারী যাঁর অন্যতম শিষ্য বর্তমান সংঘাধ্যক্ষ পরম পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ | স্বামী যতীশ্বরানন্দজী লিখেছিলেন যে আধ্যাত্মিক জীবনে পদার্পন করার পূর্বে ভদ্রজন হওয়া চাই | ব্যবহারটি যেন ভদ্রজনোচিত হয় | পতঞ্জলির যোগসূত্রের প্রাথমিক 'যম' ও 'নিয়ম' যদি পূর্ণপালন না করেই সন্ন্যাস হয়---যা প্রায়ই স্বাভাবিক কারণেই হয়ে থাকে---তখনই এ ধরণের অশোভন আচরণ দেখা দেয় যাঁরা গৈরিকধারী, এমন কারও কারও ক্ষেত্রে | তাই গার্হস্থ্য জীবনে থাকাই শ্রেয়ঃ যতক্ষণ না গৈরিকধারণের যোগ্যতা আসে |


স্বামীজী যেমন বেলুড় মঠকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছেন যে তা দীর্ঘদিন ধরে জগতে আধ্যাত্মিক আলোকবর্তিকরূপে বিরাজ করবে, তেমনি এও বলেছেন যে যত বেশী সম্প্রদায় পৃথিবীতে থাকে, তত ভাল | শেষে যদি প্রতিটি মানুষ এক একটি 'সম্প্রদায়' হয়ে ওঠে, তো তা সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থারূপে পরিগণিত হবে তাঁর মতে | এর কারণ এই যে আধ্যাত্মিকতার রাজপথ এক নয়, অনেক | দেশ-কাল-নিমিত্তরূপ প্রপঞ্চময় জগতে প্রতিটি মানুষের অবস্থান পৃথক, দৃষ্টিভঙ্গিও পৃথক | তাই সনাতন ধর্মে ইষ্টপূজার ব্যবস্থা | 'যত জন, তত দেব'---এই মন্ত্র | অতএব, যদি ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যথার্থ গড়ে ওঠে ঠাকুর-মা-স্বামীজীর নামে, তো তা প্রগতিরই লক্ষণ | ভাবপ্রচার এতে আরো অধিক হবে | কিন্তু মূল ভাবটি রক্ষা করা চাই | কেমন ছিলেন ঠাকুর, মা ও স্বামীজী ? কেমন ছিলেন রাজা মহারাজ ? এগুলো চিন্তা করতে হবে | তাঁদের আদেশ-উপদেশ ঠিক ঠিক জীবনে ধারণ করতে হবে | তবে তো |


ইতি,

অযাচিত অতিশয়োক্তির জন্য অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী,

শ্রীচরণপ্রান্তে প্রণত,

সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment