উত্তিষ্ঠত! জাগ্রত! ... ৩ (প্রাতঃসংখ্যা, ১৭ জুলাই, ২০২৫)
উত্তিষ্ঠত! জাগ্রত! ... ৩
(প্রাতঃসংখ্যা, ১৭ জুলাই, ২০২৫)
♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧♧
সম্পাদকীয়
♧♧♧♧♧♧
সঙ্ঘ, অর্থাৎ, সম্মিলিত শক্তি | স্বামীজী বলেছেন এই 'সঙ্ঘ' বস্তুটি জড় নয়, এর চৈতন্যসত্তা আছে যা কিনা এর মুখ্যরূপ, স্বরূপ | আধ্যাত্মিক আগ্রহে অনুপ্রাণিতজনের সম্মেলনেই সঙ্ঘ, তাই তার আধ্যাত্মিক সত্তা বিদ্যমান | এটি বুদ্ধেরও ভাব | তাই 'সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি' | আজ 'বহুযুগের ওপার হতে' যে আপাতবেদবিরোধী বৌদ্ধবৈদিক ভাব ভেসে এসেছে দক্ষিণেশ্বর, কাশীপুর, বরাহনগর, আলমবাজার, নীলাম্বর বাবুর বাগান ঘুরে বেলুড় মঠে---কারণ, ভুললে চলবে না বেদমন্ত্র
'সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম্।
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানাং মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি ব:।
সমানমস্তু বো মনো যথা ব: সুসহাসতি॥'
---তা বস্তুত কোনও জড় পদার্থ নয়, না তা জড়ের প্রকাশ | এই রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ---ত্রুটিবিচ্যূতি স্বীকার করে নিয়েও---সম্মিলিত চৈতন্যসঙ্ঘ যেখানে জগতের সর্বসমস্যা সমাধানের, সর্বরোগ নিরাময়ের মহৌষধি তৈরি হয়ে চলেছে সেই ঠাকুরের কাল হতে ও তার প্রয়োগও হয়ে চলেছে সেই ঠাকুরেরই কাল হতে | স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুর এই সার্বিক সেবার কাজ নিজ হাতে করে গেছেন, করে গেছেন নিশ্চুপে পরম প্রেমে মা'ঠাকরুণ, করেছেন স্বামীজী তাঁর জীবনপাত করে, করেছেন ঠাকুরের সাক্ষাৎ পার্ষদেরা, সন্ন্যাসী ও গৃহী উভয়েই, আর করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম মঠের সাধুভক্তরা প্রায় নিশ্চুপে, নিরবে, শিশিরবিন্দু যেমন ঊষালগ্নে মৌনমননে পুষ্পপ্রষ্ফুটনে রত থাকে | আজ পরিস্থিতির অনেক অবনতি ঘটলেও কার সাধ্য ঠাকুর-মা-স্বামীজীর যুগধর্মপ্রবর্তনের অমোঘ ইচ্ছার গতি ফেরায় ? বিত্তবাসনারূপ বিপর্যয় তো হয়েছে, হচ্ছে, অতি নির্লজ্জ প্রকটার সাথে আজ সঙ্ঘে পরিব্যাপ্ত কিন্তু তৎসত্ত্বেও এহো বাহ্য | নদী তার আঁকাবাঁকা পথে সাগরের দিকেই যাবে, এর নাম রামকৃষ্ণাকর্ষণ | প্রেমপাথার ঠাকুর তাঁর সঙ্ঘকে পার্থিব বিষয়বক্রতার মধ্য দিয়েও সেই জগতকল্যাণকল্পেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন | উত্থানপতনের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হবে এই সঙ্ঘ ঠাকুর-মা-স্বামীজীর ত্রিবেণীসংগমে অবগাহনের নিমিত্ত | মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ে কিন্তু অল্পক্ষণের জন্য, চিরকালের জন্য নয় | ঠাকুরের পূর্ণবৈরাগ্যে আর কোনদিন ফিরতে চাইবে কিনা, পারবে কিনা সঙ্ঘ তা ভবিষ্যৎ বলবে কিন্তু তারই মধ্যে যাঁরা ঠিক ঠিক বৈরাগ্যবান, তাঁরা ঠাকুরের অমৃতসত্তা পাবেন | আজও বৈরাগ্যবান আছেন কেউ কেউ যাঁরা নাম, যশ, সম্পত্তি, প্রতিপত্তি, কিছুই চান না, শুধু ওই রামকৃষ্ণচরণ চান | এঁরাই গৃহে, মঠে, মাঠে, প্রান্তরে, নগরে, গাঁয়ে গেয়ে চলেছেন ওই সঙ্ঘগান
'সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম্।
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানাং মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি ব:।
সমানমস্তু বো মনো যথা ব: সুসহাসতি॥'
এঁরাই মায়ের যোগ্য সন্ততি; এঁরাই ঠাকুরের যোগ্য সন্তান | 🕉
নমস্কারান্তে,
শ্রদ্ধাবনতচিত্তে,
সুগত বসু (Sugata Bose)
No comments:
Post a Comment