Sunday 7 April 2019

নেতাজিকে দেখেছিলেন আমার মা বাবা

নেতাজিকে দেখেছিলেন আমার মা বাবা
-----------------------------------------------------

আমি তো মাত্র নেতাজিকে মানসলোকে দেখেই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে শিহরিত হই | আর আমার মা বাবা উভয়েই তাঁকে দেখেছেন | মা অতি শৈশবে চার সাড়ে চার বছর বয়সে তাঁকে বহরমপুরে দেখেছিলেন ১৯৩৭ সালে | আপাদমস্তক শুভ্র পোষাক পরিহিত ছিলেন সেদিন | সাদা টুপি, সাদা পাঞ্জাবী, সাদা চাদর, সাদা ধুতি, সাদা জুতো ও ধবধবে গায়ের রঙ | মা তাঁর শেষ শয্যায়ও সেই বিবরণ দিতে গিয়ে অভিভূত হয়ে পড়তেন | এছাড়া মা বার্লিন থেকে প্রচারিত সেই রোমহর্ষক বিখ্যাত বেতারভাষণ শুনেছেন, "আমি সুভাষ বলছি |"

আমার বাবা পাটনায় গান্ধী ময়দানে সুভাষচন্দ্রের ভাষণ শুনেছেন | তখন তাঁর ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের সাথে রাজনৈতিক মতদ্বৈধতা চলেছে | এমত অবস্থায় ময়দানে সমবেত পাটনার প্রসাদ অনুরাগী ক্ষিপ্ত সমর্থকের দল সুভাষচন্ন্দ্রের মঞ্চ লক্ষ্য করে চটি ছুঁড়ে মারতে থাকেন | ফলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে ও সভা ভেঙে যায় | উদ্যোক্তারা দুঃখ প্রকাশ করেন সভা না হতে পারার হেতু | কিন্তু সুভাষচন্দ্র অবিচল | বলে বসলেন পরদিন আবার ওই একই ময়দানে বক্তৃতা দেবেন ও যতদিন না পাড়ছেন তা দিতে, ততদিন পাটনা ছাড়বেন না |

পরদিন আবার সভা বসল | মঞ্চে প্রস্তুত সুভাষচন্দ্র আর মাঠে প্রস্তুত জনতা সভা ভঙ্গ করবেন বলে | কিন্তু আজ তাঁদের আর সুযোগ দিলেন না তিনি | প্রথমেই বললেন, "मै तो बाबु राजेनृपृसादजिकी एक मामुलि सिपाही हु |" অমনি তুমুল করতালিতে গান্ধী ময়দান মুখর হয়ে উঠল আর সুভাষচন্দ্র তাঁর অভিপ্রেত কথাগুলি রাখলেন মানুষের কাছে | সালটি সম্ভবত ১৯৩৮--১৯৩৯ যখন গান্ধীবাদিদের সাথে সুভাষচন্দ্রের মতবিরোধ তুঙ্গে | সেদিনের জনসভায় বিপুল সমর্থন পেয়ে যখন গাড়ী করে সুভাষচন্দ্র ফিরছেন, তখন তাঁর গাড়ীর পেছনের মাডগার্ডে বসে তাঁর সাথে চলেছেন আমার পিতৃদেব | অনেকটা পথ এইভাবে গিয়ে শেষে নেমে পড়েন গাড়ী থেকে | এই রকম ছিল সুভাষচন্দ্রের চৌম্বক আকর্ষনী শক্তি |

অনেক কথা বলে ফেললাম ঘরের | হয়ত বা অবান্তর আপনাদের কাছে কিন্তু মনিমানিক্যখচিত এগুলি আমার কাছে | ছেলেবেলায় বাবার কাছে শোনা, আজ আপনারাও শুনে নিলেন |

রচয়িতা : সুগত বোস (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment