Sunday 7 April 2019

ছায়াদি


ছায়াদি
----------

প্রতিদিন সকালসন্ধ্যা ছায়াদির হাতের চা টি না হলে চলে না | দীর্ঘদিনের অভ্যাস, কি করি ? আর কারুর হাতের চা ভলোই লাগে না | এরা মাতৃবৎ সেবাই করে গেল আজীবন, এদের কথা কি কেউ ভাববে না ? কি বা সম্বল আছে এদের ? আছে তবু অপার্থিব প্রেম মনিবের পরিবারের প্রতি |

সেই যখন আমি ১৬, তখন ছায়াদি ২৬ | আজ থেকে ৪১ বছর আগে কাজে লেগেছে আর এই এতকাল হাসিমুখে সেবা | মাঝে মাত্র কটা মাস কাজে বিরতি | তারপর আবার নিরলস সেবা | যুগ পাল্টে গেল, জগতে কত পরিবর্তন এলো, ছায়াদির মধ্যেও কত বিবর্তন লক্ষ্য করলাম, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এরা পৃথিবীতে এসে কতটুকুই বা পেল ?

নিরক্ষর এই অতি সুসংস্কারসম্পন্না শুভবুদ্ধিমতি নারী আমার প্রণম্য | বাল্যকালেই মায়ের শিক্ষা | ঘটনাটি সামাণ্য কিন্তু শিক্ষাপ্রদ | তখন আমার বয়স সম্ভবত ১৯ | কোনো কারণে ছায়াদির প্রতি রূঢ় বাক্যব্যয় করে ফেলি আর তৎক্ষণাৎ মায়ের ভর্ৎসনা ও আদেশ, "যাও, প্রণাম করে ক্ষমা চাও |" ক্ষমা চাইলাম প্রণাম করে আর সেই মুহূর্তে আচম্বিতে এক যবনিকা সরে গেল চোখের সামনে থেকে ও মানুষকে এক নতুন আলোয় দেখতে পেলাম | এ উক্তি একান্ত সত্য, এতটুকুও অতিরঞ্জিত নয় |

এটি মাতৃক়পা ! বিশ্বমায়ের প্রতিভূ যিনি, যিনি গর্ভধারিণী, তিনিই আবার চৈতন্যদায়িনী মা | যিনি শিক্ষা দিলেন তিনি সেই, আর যাঁর চরণে প্রণত হলাল, তিনিও সেই --- এ বোধ অবশ্য আরো পরে এসেছে |

সেদিনের সেই ঘটনাটি যুগান্তকারী কারণ আমার যুবাবয়সের সংবেদনশীল মনে তা গভীর রেখাপাত করে ও আমার চেতনাকে প্রবুদ্ধ করে মনুষ্যত্বে উপণীত হতে |

আজ মা পরলোকপ্রাপ্তা, স্থুলরূপে তাঁকে আর পাইনা, কিন্ত প্রতিদিন সকালসন্ধ্যা ছায়াদির হাতের চা টি এই মাতৃবিয়োগ প্রশমিত করে ও ভাবিয়ে তোলে, "এদের কি হবে ?"

রচয়িতা : সুগত বোস (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment