Saturday, 15 April 2023

কত রঙ্গ দেখালি মা !


কত রঙ্গ দেখালি মা !

---------------------


''মানুষ বাঘকে নারায়ণ ভাবতে পারে কিন্তু বাঘ মানুষকে খাদ্যই ভাববে | 'যত মত তত পথ' তত্ত্ব হিসেবে সুন্দর বটে কিন্তু তথ্যগতভাবে ভ্রান্ত | তাই তা কার্যত বিফল |''

---------------------------------------------------


ক'দিন পূর্বের উপোরক্ত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত মন্তব্য আসছে তাতে সাধারণ মানুষের বিচারবুদ্ধি সম্বন্ধে বিশেষ সন্দেহ জাগে | এত অজ্ঞতা বিষয়বস্তু বোঝার ব্যাপারে যে আশ্চর্য হই | নরখাদক বাঘ যে হিন্দুবিদ্বেষি ধর্ম ও ওই সকল মতাবলম্বী অসহিষ্ণুজনদের (সকলকে নয়) অভিহিত করছে এখানে ও বাঘকে নারায়ণজ্ঞানকারী মানুষ যে বেদবুদ্ধিধারী হিন্দুকে (সকলকে নয়) নির্ণয় করছে, তা কেউ বুঝল না | ভাবতেই পারিনি মানুষ এত স্বল্পবুদ্ধি !


কোরান, হাদীস, বাইবেল না পড়েই হিন্দুরা ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্মকে সনাতন ধর্মের সমগোত্রীয় কল্পনা করে নেন | এমত অবস্থায় ঠাকুরের বাণী 'যত মত, তত পথ' আরও গোল পাকিয়ে বসেছে | ঠাকুর তো আর ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের মূল সিদ্ধান্তগুলি ও তার ঐতিহাসিক ভয়াবহ পরিণাম জগৎ জুড়ে, এ ব্যাপারে গভীরে অনুধ্যান করেননি | তাই তাঁর ও বিশ্বমন্ত্র শাশ্বতসুন্দর ও সুদূর ভবিষ্যতে মানবসভ্যতার আলোকবর্তিকা হলেও তথ্যগতভাবে ভ্রান্ত | ইসলামের শাস্ত্রগত ও ইতিহাসগত তথ্য ঠাকুরের জানা ছিল না | স্বামীজী জানতেন | তাই তাঁর 'বাণী ও রচনা' তন্ন তন্ন করে পড়লে জানতে পারবেন তাঁর এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য | না পড়েই মন্তব্য করেন, এই হল আপনাদের সমস্যা |


কোরান অনুযায়ী পৌত্তলিক বহুদেবতাবহুল সকল ধর্মই মিথ্যা ও তাই ধ্বংসের উপযোগী | হিন্দুধর্ম সেই কারণেই ইসলামের চোখে মিথ্যা ও ধ্বংসের যোগ্য |  ভারতবর্ষে সহস্রাধিক বর্ষ ধরে হিন্দুনিধন, হিন্দু মন্দির ধ্বংস, জোর করে তরোয়ালের আগায় ইসলামে ধর্মান্তকরণ, জগতদ্বিখ্যাত বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ও তার সুপ্রচীন গ্রন্থাগার জ্বালিয়ে দেওয়া, হিন্দু নারীর বলাৎকার ও দাসীরূপে মধ্যপ্রাচ্যে প্রেরণ ও তৎপশ্চাৎ বিক্রয় -- এ সবই শাস্ত্রসমর্থিত হয়েই অপরাধীরা হাজার বছর চালিয়ে গেছেন, আজও যার ধারা উপমহাদেশে অব্যাহত |


ঠাকুর অদ্বৈতভূমির চূড়ান্ত শিখরে বসে যদি বলেন 'যত মত, তত পথ' তাতে তা তথ্যগতভাবে সত্য হয়ে যায় না | ইসলামের শাস্ত্রগত স্বরূপ ঠাকুর জানতেন না | অর্থাৎ, তাঁর সুফী গুরু গোবিন্দ রায় ও সব কথা তাঁকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি কারণ তা ঠাকুরের ন্যায় উত্তম অধিকারীর ক্ষেত্রে ওই সুফী সাধন বহির্ভূত বলে বিবেচিত হয়েছিল | অতএব, প্রায় নিরক্ষর ঠাকুরের ইসলামের পার্থিব স্বরূপ জানার অবকাশ আর হয়নি |


হিন্দু ও মুসলমানেরা হাজার বছর পাশাপাশি থেকেও আশ্চর্যভাবে একে অপরের ধর্মমত, রীতিনীতি ও প্রথা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, এ কথা ঠাকুরেরই শ্রীমুখের | সেই আবর্তে বাস করে তাই ঠাকুর জানতেই পারেননি ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম হিন্দুধর্মকে কি চোখে দেখে | যদি জানতেন তো অবশ্যই সে বিষয়ে আরও বলে যেতেন | অবশ্য কি যে বলেছেন আর কি যে বলেননি, তা বিচার করা অসম্ভব কারণ আমরা আংশিক সংবাদই তাঁর ব্যাপারে পাই নানা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে |


যাই হোক, 'যত মত, তত পথ' বেদান্তবুদ্ধিতে সত্য বলে প্রতীত হলেও তথ্যগতভাবে ভিত্তিহীন, তাই ভ্রান্ত ও বাস্তবে বিফল | 


ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম ধ্বংসাত্মক | তারা ঠাকুরের ভাষায় মতুয়ার বুদ্ধিতে ভুগছে | অতএব, এই দুটি ধর্ম যাদের অস্তিত্ব আর সকল ধর্মের বিনাশের ওপর স্থিত, তারা কেমন করে প্রাথমিকভাবে ধর্ম বলে পরিগণিত হবে ও তৎপশ্চাৎ ঈশ্বরলাভের নিমিত্ত সত্য পথ বলে বিবেচিত হবে ? এই দুই ধর্মের লক্ষ্য মরণোত্তর স্বর্গলাভ, মর্তলোকেই ঈশ্বরলাভ নয় | কোথায় মিল সনাতন ধর্মের সাথে ? আত্মজ্ঞানের কথা তো ওঁরা জানেনই না | জোর করে হিন্দুরা সমন্বয় খুঁজলে তো আর তেলে জলে মিশ খাবে না | কি করে হবে 'যত মত, তত পথ'?


তা একমাত্র সম্ভব যদি তাঁরা নিজেদের শাস্ত্র আমূল পরিবর্তন করে বৈদান্তিক ভাবধারায় সংস্কারসাধন করেন | তাহলে তো তা আর ইসলাম অথবা খ্রীষ্টধর্ম রইল না, সনাতন ধর্মমত হয়ে গেল | তাহলে 'যত মত, তত পথ' সত্য হল কি করে ?


হ্যাঁ, 'যত মত, তত পথ' সনাতন ধর্মের মতগুলি সম্বন্ধে এক প্রকার বিশুদ্ধিকরণের পর খাটে বটে, ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্মের ক্ষেত্রে মোটেই নয় |


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment