ময় দানবের খেল
ময় দানবের খেল
------------------
ছোটবেলায় মহাভারতে খাণ্ডবদহন পড়তে গিয়ে ময় দানবের মায়ার সাহায্যে ইন্দ্রপ্রস্থ রচনার কাহিনী পড়ে আশ্চর্য হই | সেই থেকে এই মায়া ব্যাপারটা কখনও কখনও মাথায় চাড়া দিত কিন্তু কোন কিনারা করতে পারতাম না | অনেক পরে ২২-২৩ বছর বয়সে স্বামীজীর বক্তৃতা পড়তে গিয়ে ও শেষে ২৫-২৬ বছর বয়সে তাঁর 'জ্ঞানযোগ' পড়ে ধীরে ধীরে এ বিষয়ে একরকম ধোঁয়াটে ধারণা হয় | কারণ মায়া অনির্বচনীয়, এই কথা আদি শংকরাচার্যের |
মায়াকে মায়া দিয়েই বুঝি আমরা | সে বোঝা তো আর বোঝা (comprehension) নয়, সে বোঝা নিতান্তই বোঝা (load of ignorance) | একমাত্র সমাধিবান পুরুষ সমাধির পূর্বক্ষণে ও সমাধি হতে বুত্থানকালে মায়ার এক প্রকার সম্যক -- তাও সম্যক নয় -- ধারণা করতে পারেন | তাই এই মায়িক প্রপঞ্চময় অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডবিষয়ে বলতে গিয়ে ঋগবেদের ঋষি জিজ্ঞাসা করেছেন নাসদিয় সূক্তে কি এই মায়া, কোথা হতে এলো, কি এর গতিপ্রকৃতি, কোথা ধাবমান, কে বলবে? হয়ত বা স্বয়ং সর্ববিদ ব্রহ্মই জানেন এর রহস্য, হয়ত বা তিনিও জানেন না, আর, তাহলে কেউই জানেন না |
মায়া আছে আবার নেই, আবার তা বলাও যায় না | আপেক্ষিকতার নাম মায়া, তার সংজ্ঞাও তাই আপেক্ষিক হয়ে পড়ে যা পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ, ধ্রুব নয় | তাই স্বামীজী বেশ বলেছেন, যা কিছু আপেক্ষিক সত্য, তাই মায়া | যা কিছু প্রপঞ্চময়, তাই মায়া | সংজ্ঞা দেওয়া যায় না, শুধু এইমাত্র বলা চলে যে তা আপেক্ষিক সত্য, চূড়ান্ত সত্য নয় যা মায়ার অতীত চিরস্থির ব্রহ্ম |
বড় হয়ে তাই দেখছি, সবই ময় দানবের খেল !
রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)
No comments:
Post a Comment