Tuesday 10 March 2020

আজকের এই অপসংস্কৃতির আচ্ছাদিত আলোয় বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ... ১

আজকের এই অপসংস্কৃতির আচ্ছাদিত আলোয় বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ... ১
----------------------------------------------------------------------------------------------

বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলার সংস্কৃতির ক্রমান্বয়ে যে অধঃপতন হয়ে চলেছে, তারই প্রতিফলন আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে । স্বীয়সংস্কৃতির প্রভাবে এই অবনমন রোধ করুন সামর্থ অনুযায়ী ।

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রান্তভাগে শুনেছি স্বামীজীর সাথে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাবিষয়ক ঘোরতর মতদ্বৈধতা হয়েছিল । বিষয়টি ব্রহ্মচর্য নিয়ে ও বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়ের একসাথে পড়াশোনা নিয়ে । রবীন্দ্রনাথ লিঙ্গভেদ নির্বিশেষে এক সাথে অধ্যয়নের পক্ষপাতী ছিলেন আর স্বামীজী ছিলেন তার বিপক্ষে । স্বামীজীর মতে অখণ্ড ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমেই যথার্থ চরিত্রগঠন সম্ভব যা শিক্ষার মূল আধার । সেহেতু ছেলেমেয়ের অধ্যয়নের পৃথক ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি । নিবেদিতার বাগবাজারের গৃহে আমন্ত্রিত জগদীশচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোচনার আসরে দুই মহারথীর মধ্যে এই প্রীতিপূর্ণ মতানৈক্য দেখা দেয় ।

সেদিন কবি ব্রহ্মর্ষির অন্তর্দৃষ্টি ও সুদূরপ্রসারিত পর্যবেক্ষণ সম্বন্ধে ততটা ভরসা রাখতে পারেননি ও নিজমতকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন স্বাভাবিক কারণেই । স্বামীজীর প্রস্তাবিত অখণ্ড ব্রহ্মচর্য পালনের প্রয়োজনে স্ত্রীপুরুষের অধ্যয়নের পৃথক আয়োজনকে গুরুত্ব দেননি তিনি । সম্ভবত অখণ্ড ব্রহ্মচর্য পালনের বাস্তবসম্ভাবনা ও শিক্ষাক্ষেত্রে তার প্রয়োগের যৌক্তিকতা সম্বন্ধেও কবির যথেষ্ট সন্দেহ ছিল । ত্রীকালজ্ঞ ঋষির দিব্যদর্শনের প্রতি সম্ভবত আস্থা রাখতে পারেননি ও স্বীয় যুক্তি, বুদ্ধি ও বিচারের দ্বারা যা বুঝেছেন, তাই সঠিক বলে সাব্যস্ত করেছেন । আর বিবেকানন্দ ? তিনি কোনমতেই মেনে নেননি রবীন্দ্রনাথের ভাব ও সিদ্ধান্ত । তিনি তাঁর গভীর প্রজ্ঞায় বুঝেছিলেন যে কবির সিদ্ধান্ত ভুল ও তার ভবিষ্যৎ সামাজিক পরিণাম ভয়ংকর ।

সেদিন বাদানুবাদে কোনো সমাধান হয়নি । যে যার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন । কিন্তু কালপ্রবাহে স্বামীজীর সিদ্ধান্তই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে । বিদ্যানিকেতনে নারীপুরুষের সহাধ্যয়ন ব্রহ্মচর্যবিরোধী বলেই প্রতিপন্ন হয়েছে ও হচ্ছে । ব্রহ্মচর্যের অভাবে শিক্ষার্থীদের চরিত্রগঠন হচ্ছে না যথাযথভাবে ও তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অশ্লীলতার বিকৃত প্রদর্শনে । অবশ্য রবীন্দ্রনাথের গানের বিকারসাধন ও তার রুচিবিগর্হিত প্রদর্শনের জন্য কোনভাবেই কবিকে দায়ী করা চলেনা । শুধু এইমাত্র বলা যায় যে বিবেকানন্দবুদ্ধি আজ প্রমাণিত অভ্রান্ত । রবীন্দ্রবুদ্ধি এবিষয়ে ভ্রান্তির শিকার । তাই ঋষিবাক্য আপ্তবাক্য, অবশ্যপালনীয় ।

রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)


Sugata Bose Nirmal Kumar Dey আর কবে করব, প্রৌড়ত্বের প্রারম্ভে, জীবনের প্রান্তভাগে ? সারাজীবন তো স্বামীজীকেই অনুসরণ করে এলাম । তবে ভাষা ও ভাবের ভাণ্ডারে অবলীলায় অনুপ্রবেশের জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে চিরঋণী ।

No comments:

Post a Comment