Saturday, 9 August 2025

তুলসী মহারাজ ... ৩


তুলসী মহারাজ ... ৩

●●●●●●●●●●●●●●


এ ভারী আশ্চর্য ব্যাপার ! যদিও উদ্বোধন ও অদ্বৈত আশ্রম হতে প্রকাশিত কোন কোন বইতে আজও তুলসী মহারাজকে ঠাকুরের সাক্ষাৎ পার্ষদ বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তবুও রামকৃষ্ণ মিশনের কোন সাধুর বক্তৃতায় তাঁর নাম উচ্চারিত হতে শুনিনি এবং সপার্ষদ ঠাকুরের গ্রুপ ফোটোতে তুলসী মহারাজের ছবি গত চার দশকের ওপর দেখিনি | কেন এই অনীহা? কেনই বা এই মহাপুরুষের কীর্তি জনসমক্ষে আনা হল না ও হচ্ছে না আজও ? তাবড় তাবড় মহারাজরা বক্তৃতায় বলেন সর্বত্র যে ঠাকুরের ১৬ জন সন্ন্যাসী পার্ষদ ছিল ও তাঁদেরই গাথা গান | একবার ভুলেও তুলসী মহারাজের নাম করেন না, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের ও রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবান্দোলনের প্রচার-প্রসারে তাঁর অমর কীর্তির কথা উল্লেখ করেন না, গুণকীর্তন করা তো দূরের কথা | এ এক বিচিত্র ব্যাধি যার নিরাময় হওয়ার আশু প্রয়োজন | সর্বসাধারণকে তুলসী মহারাজরূপ রামকৃষ্ণ-সন্তান হতে দূরে রাখার এই প্রয়াসে সঙ্ঘের ক্ষতি হয়েছে এ যাবৎ, হয়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে | এর নিরোধ প্রয়োজন | মহাতেজস্বী এই মহাপুরুষের জীবনচর্চায় সকলের কল্যাণ | তাঁকে আড়াল করলে ঠাকুরেরই একটা দিককে অলক্ষ্যে রাখা হয় | তাতে তাঁর লীলাকীর্তন অসম্পূর্ণ থাকে |


শরৎ মহারাজের মহাসমাধির অব্যবহিত পরে শ্রীরামকৃষ্ণ-সারদা মঠ ও বিবেকানন্দ মিশনের অধ্যক্ষপদে তুলসী মহারাজকে বরণ করা নিয়ে ও তারপর ব্যাঙ্গালোর মঠের কর্তৃত্ব নিয়ে তুলসী মহারাজের সাথে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের যে বিরোধ ঘটে তা ব্যাঙ্গালোর কেসে শেষে পরিণত হয় যার নিষ্পত্তিহেতু ১৯৩৫ সালে তুলসী মহারাজ ওই মঠের দায়িত্বভার ত্যাগ করে এক প্রকার অলিখিতভাবেই মঠমিশনের সংস্রব ত্যাগ করেন ও কেরলে বসবাস করতে চলে যান | শেষ বয়সে ওট্টাপালাম আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন ও ওইখানেই তাঁর শেষ বিহার ও সাধনস্থল করেন | ১৯৩৮ সালে ওই ওট্টাপালাম আশ্রমেই মহাসমাধি লাভ করেন | 


তুলসী মহারাজ অভেদানন্দজীর আহ্বানে এমেরিকা গমন করেন তাঁকে সহায়তা করার জন্য ১৯০৩ সালে এবং ওখানে ব্রুকলিনে একটি রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন | অথচ আশ্চর্য, এ সত্যটি 'Companions and Followers of Sri Ramakrishna' বইতে লেখা থাকলেও জীবনে কোন সাধুর মুখে অথবা বক্তৃতায় শুনিনি | যেন তুলসী মহারাজের স্মৃতি মুছে ফেলার এক অভিনব প্রয়াস | দক্ষিণ ভারতে তো রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবান্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান সর্বোচ্চ | অথচ, দক্ষিণ ভারতে শশী মহারাজের অনস্বীকার্য অবদানকেই শুধু মঠমিশনের সাধুরা মান্যতা দিয়ে থাকেন, তুলসী মহারাজ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ মৌন | এ ভারী আজব অবস্থা !


তুলসী মহারাজ যদি ঠাকুরের শিষ্য নাই হন, যদি তিনি স্বামীজীর প্রথম শিষ্য হন, তো তাঁর জীবনচরিত কেন প্রকাশ করলেন না স্বামী অব্জজানন্দ তাঁর 'স্বামীজী পদপ্রান্তে' বইতে ? কেন মিশনের কোন বইতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়না যে তিনি ঠাকুরের শিষ্য নন, স্বামীজীর শিষ্য এবং সেইমতই তাঁর জীবনী প্রকাশ করা কেন হয় না ? তাঁকে তো ত্রিশঙ্কুর ন্যায় মহাশূণ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তাঁর আধ্যাত্মিক পরিচয় গোপন রেখে | এ কেমন চিত্রায়ণ ? কেমন চরিত্রাঙ্কন এ ? 


কেন গম্ভীরানন্দজীর লেখা 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তমালিকা'--এই বইতে তুলসী মহারাজের জীবনী নেই, যদিও ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তা ছিল ? কেন চেতনানন্দজীর 'God Lived With Them'--এই গ্রন্থে তুসলী মহারাজ missing ? কেন ক্রমাগত এই অপপ্রচার চলে আসছে যে ঠাকুরের মাত্র ১৬ জন সাক্ষাৎ সন্ন্যাসী পার্ষদ, ১৭ জন নয় যা প্রকৃত সত্য ? কেন তুলসী মহারাজকে আধ্যাত্মিক পিতৃপরিচয় হতে বঞ্চিত করার অপপ্রয়াস, রামকৃষ্ণপার্ষদরূপে তাঁর পরিচয়কে মুছে ফেলার সুদীর্ঘ প্রচেষ্টা ? ব্রহ্মগোপাল দত্ত প্রণীত 'Swami Nirmalananda, Tulsi Maharaj, a Direct Disciple of Sri Ramakrishna, a Focus on Facts and Facets' পাঠ করলেই সব বুঝতে পারবেন আপনারা | বোঝা উচিতও নৈতিক দিক দিয়ে, জীবনে অকপটভাবে সত্যপালনের জন্য | যদি তা জেনেশুনেও না করেন তো ভক্তরূপে নিজের প্রতিকৃতি দেখেন কি করে আরশিতে ?


সকলকে সত্যানুসন্ধানে আহ্বান করে বিরতি নিলাম,

সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment