Thursday 15 February 2018

'আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল' ... ১


'আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল' | অর্থাৎ, অহংবুদ্ধিটি নাশ হলে চিত্তের মলিনতা বিদূরিত হবে | বাসনার শ্রোতে চিক্ত মলিন হয়ে রয়েছে | এই বাসনা নিরন্তর প্রবহমান অজ্ঞানতাহেতু | অজ্ঞানতার কারণ নিরুপণ করা যায় না ও তাকে মহামায়ার মায়াশক্তির প্রকাশ, এইমাত্র আক্ষা দেওয়া চলে | কিন্ত এই অজ্ঞানতা নাশের উপায় আছে | ঋষিরা ব্যক্তিসত্তার পৃথক অনুভবকেই খন্ডবুদ্ধির অচেতনতারূপে নির্ধারণ করেছেন | কেন অখন্ডের এই খন্ডবুদ্ধি, এ এক প্রহেলিকা | কেন নির্গুণ দ্বন্দাতীত পরব্রহ্মের এই ব্যষ্টিরূপ খন্ডানুভূতি, এ বিচার করতে গিয়ে শঙ্করাচার্য অদ্বৈতসিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন | তিনি বলছেন যে প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মের অখন্ডতা অক্ষুন্ন আছে | তাঁর ওপর যেন মায়ার আচ্ছাদন পড়েছে, এইমাত্র | তাতে তাঁর স্বরূপবিচ্যুতি ঘটছে না, কোনো রূপান্তর হচ্ছে না যদিও অদ্ভুত এই ঐন্দ্রজালিক ব্রহ্মান্ড প্রতীয়মান হচ্ছে | মনঃকল্পিত এই জগৎপ্রপঞ্চের মূলে রয়েছে মানসকল্পনা যার প্রকৃত কোনো অস্তিত্যই নেই, শুধু অনির্বচনীয় মায়ার অলীকসৃষ্টি | এই প্রকাশোন্মুখ কল্পনাকে বিপরীত কল্পনাদ্বারা অপ্রকাশমার্গে ধাবিত করতে হবে | তাই ঠাকুর বলছেন আমিত্ববুদ্ধির নাশ ঘটাতে কারণ এই 'আমি'টিকে কেন্দ্র করেই যা কিছুর আপাতপ্রকাশ ঘটছে | অহংনাশেই তাই অজ্ঞানতানাশ ও স্বরূপে পুনরাবস্হান | অনন্তসত্তা নিরুপাধিক ব্রহ্মের রূপকল্পনার ইতি ও নির্বিশেষ অখন্ডচৈতন্যের স্বপ্রকাশ | ওঁ ব্রহ্ম |
রচয়িতা : সুগত বোস (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment