সাবধান ! স্বামীজী সব দেখছেন ... ১
সাবধান ! স্বামীজী সব দেখছেন ... ১
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
বহুদিন আগে স্বাামীজী বলে গেছেন, "চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না |" শুনেছি বর্তমান নেতানেত্রীরা স্বামীজীর দ্বারা অনুপ্রাণিত | তাহলে তাঁদের এই আপ্তবাক্য, এই সাবধানবাণী স্মরণ রাখা উচিত | স্বামীজী বহির্কলেবরমাত্র ত্যাগ করেছেন কিন্তু আজও তিনি আমাদের মাঝে সূক্ষ্মদেহে বিদ্যমান | সব দেখছেন তিনি | কর্তৃপক্ষের চালাকি, মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে উদ্দেশ্যসিদ্ধি, কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির বাইরে নেই | ব্যবস্থাও সেইরূপই করবেন তিনি, মাত্র কালের অপেক্ষা | কর্মফল, ঈশ্বরের রোষ, ইতিহাসের প্রতিশোধ---এর তিনিই একসূত্রে গাঁথা, নামান্তরমাত্র একই সংঘটনের | এর হাত থেকে নিস্তার নেই, অবশ্যই নেমে আসবে অমোঘ দণ্ড দুঃশাসকের ওপর | মানুষের অকল্যাণসাধন করেন যাঁরা ক্ষমতার অপপ্রয়োগের দ্বারা, ওই ক্ষমতাই তাঁদের কাল হবে, আজ নয়ত' কাল | কিন্তু হবেই হবে |
রাজনেতানেত্রীরা নাস্তিক কারণ তাঁরা বৈষয়িক, অধ্যাত্মবুদ্ধির লেশমাত্র বিকাশ হয়নি তাঁদের | ক্ষমতালাভ ও ক্ষমতারক্ষা যেনতেনপ্রকারেণ---এই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য | জনকল্যাণপ্রকল্পসকল জনতার চোখে ধূলো দেওয়ার, তাঁদের তৃতীয় রিপুকে জাগিয়ে তুলে দাসে পরিণত করার কৌশলমাত্র | উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক দাসত্বব্যবস্থার প্রণয়ন, মানুষকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা, স্বাধীন করা নয় | স্বাধীনতা মাত্র কতিপয় লোকের জন্য, বাকি সেই সনাতন দাস | নির্বাচন প্রহসনমাত্র যেখানে তা অপরাধীদের ক্ষমতায় আসীন করার সহজসাধন | বিধায়ক, সাংসদ যেখানে নীতিগতভাবে অনুুপযুক্ত, শিক্ষাগত, সংস্কৃতিগতভাবে নিকৃষ্টতম, সেখানে নেতানেত্রীও হবেন তদনুরূপ | তাঁদের কাছ থেকে সুশাসন আশা করাই অলীক কল্পনা | তাঁরা যে দুর্নীতিপরায়ণ-পরায়ণা হবেন, এতে আর আশ্চর্য কি ? দুঃখ সেখানে নয় | দুঃখ এই যখন দেখি সামান্য অর্থ ও পদের লোভে সমাজের বিদগ্ধজনের এক বৃহদাংশ এই দুষ্ট প্রশাসকদের দাসে পরিণত | এমনকি বিধায়ক-সাংসদদের মধ্যেও যাঁরা উচ্চশিক্ষিত, সংস্কৃতিসম্পন্ন, তাঁদেরও যখন দেখি এই দুষ্টচক্রের অঙ্গীভূত, তখন মানুষের চরিত্রসম্বন্ধে বিশেষ প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হতে হয় | অর্থাৎ, শিক্ষা, সংস্কৃতি নীতিবিবর্জিত হলে, তা কুফলদায়ী হবেই হবে |
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এরকম হল কেন ও তার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে কিভাবে | এ গভীর তাত্ত্বিক প্রশ্ন যার বিবর্তনগত ঐতিহাসিক আলোচনা এতই বিস্তৃত হয়ে পড়বে যে তাতে না যাওয়াই ভাল | সংক্ষেপে এইমাত্র বলা যায় যে অন্ততঃ বাংলায় গত কয়েকশ' বছর ধরে ইন্দ্রিয়পরায়ণতা সমাজকে গ্রাস করেছে স্থূলভাবে, সূক্ষ্মভাবে যাকে বর্ধিত করেছে এমনকি বাংলার সাহিত্যসংস্কৃতিরও এক বৃহদাংশ | রিপুর দংশনে বাংলা জর্জরিত, তার ওপর বৈদেশিক শাসনের দ্বারা বহু শতাব্দি আক্রান্ত, নিপীড়িত | বৌদ্ধ বামাচার, বৈষ্ণব বামাচার, শাক্ত তান্ত্রিক বামাচার, ব্রাহ্মণ কৌলীন্যপ্রথানুযায়ী বহুবিবাহের প্রচলন, ইসলামীয় অত্যাচার, সর্বশেষে ইংরেজশাসন---এ সবই তাদের স্বল্পাধিক প্রভাব বিস্তার করে বাঙালীর চরিত্রকে দুর্বল করেছে অনেকাংশে যেমন তা পক্ষান্তরে উর্বরও করেছে বহুধা সৃজনশক্তিদানে | বাঙালী তাই এক বর্ণসংকর জাতি | এর মাঝে বাঙালী অনেকটাই হারিয়েছে ক্ষাত্রতেজ | তাই বাঙালীর আজ এই দুর্দশা | এটি বাঙালীর বর্তমান বিরম্বনার কারণ নির্ধারণে, বিবরণে, বিশ্লেষণে অতি সংক্ষিপ্তসার অপুর্ণপ্রয়াস, তাই প্রাকমার্জনা প্রার্থনীয় |
স্বামীজী ইতিহাবেত্তা ছিলেন, গভীর মননশীল ঋষি | তাঁর পর্যবেক্ষণে বাংলার বর্তমান হাল শ্রদ্ধাহীনতার কারণে | ব্রহ্মচর্যের অভাবে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে | এ মেরুদণ্ড পুর্গঠন মাত্র আক্ষরিক শিক্ষার দ্বারা সম্ভব নয় | মস্তিষ্কের কোষগুলির বস্তুগত যান্ত্রিক চলাচলে, জড়বাদের বর্ধনে, অধ্যাত্মবোধবুদ্ধিহীন পুঁথিগত বৈষয়িক শিক্ষার দ্বারা জাতি পুনরুজ্জীবিত হবে না | চাই সেই সনাতন শিক্ষাপদ্ধতি, গুরুগৃহবাস, শ্রদ্ধাজাগরণ স্নায়ুতে, শোণিতে মহাপ্রাণসঞ্চার | তবে হবে জাতিগঠন | তখন শৃগালের দল যাঁরা আজ নরদেহভক্ষণে মত্ত, তাঁরা নগর ছেড়ে বনে পলায়ন করবেন যেথা তাঁদের সত্যনিকেতন |
এখন প্রশ্ন হল এই পরিবর্তন সমাজের বুকে আসবে কি করে ? তারই আলোচনায় এবার প্রবৃত্ত হব | মাত্রপ্রতিক্ষা দ্বিতীয় অধ্যায়ের |
প্রথম পর্ব শেষ |
ক্রমশঃ
রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)
No comments:
Post a Comment