Sunday 15 May 2022

হিন্দুজাগরণ কেমনভাবে সাধিত হতে পারে 


হিন্দুজাগরণ কেমনভাবে সাধিত হতে পারে 

------------------------------------------


হিন্দুদের আরো বেশী শিক্ষিত হতে হবে নিজেদের ধর্ম, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্বন্ধে | তা নাহলে তাদের বিধর্মীর হাতে নিরন্তর দুর্গতির কোনদিনই ইতি হবে না | শুধু আমরা সব ধর্মকেই সত্য বলে গ্রহণ করি -- এই একপাক্ষিক মহানুভবতা দেখালে দিনে দিনে হিন্দুর ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হতেই থাকবে | এই কপট সর্বধর্মসমন্বয়ের ভাসা ভাসা প্রচেষ্টা হিন্দুকে এযাবৎ দুর্বল করেছে, ভবিষ্যতে সমূলে ধ্বংস করবে যদি না হিন্দুরা এখনও সতর্ক হয় আগ্রাসী বিধর্মীদের মূল নীতি ও প্রকল্পগুলির যাথার্থ সম্বন্ধে |


১৩০০ বছরের ওপর ইসলামীয় ও ৫০০ বছরের ওপর খ্রীষ্টীয় আক্রমণ ও আগ্রাসনের শিকার হয়েছে হিন্দুরা যার সবচেয়ে ভয়ানক ক্ষতিকারক পরিণতি হয়েছে আমাদের মাতৃভূমির ১৯৪৭ সালে বিভাজন | হিন্দু সমাজের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, বহুমুখীনতা ও অনৈক্য তাকে বিদেশী শাসনের কবলে বারংবার পতিত করেছে | এতকালে বুঝি হিন্দুর সম্বিৎ ফিরছে | 


স্বামী বিবেকানন্দের মতাদর্শ পূর্ণরূপে প্রায় কেউই হয় বুঝতে পারেনি নয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে বুঝেও তা যথাযথভাবে বাস্তবে পরিণত করতে পারেনি | এর ফলে হিন্দু স্বাধীনতার পরেও পদে পদে বিপর্যস্ত হয়েছে | আজ দিন বদলেছে | এতদিনে একটি জাতীয়তাবাদী দল হিন্দুর স্বার্থরক্ষার কাজে অগ্রণী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে জনমতের বলে | তাই সুদীর্ঘকালের ঐতিহাসিক অত্যাচারের কাহিনী বেড়িয়ে আসছে জনসমক্ষে যা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল এতকাল | এই অনৃতভাষণের জন্য হিন্দু জানতেই পারেনি যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নরসংহার -- ৮০ থেকে ১০০ কোটি হিন্দু মরেছে ইসলামের তরবারির ঘায়ে -- সংঘটিত হয়েছে ইসলামীয় আক্রমণ ও শাসনকালে অখণ্ড ভারতবর্ষে | কিন্তু আজ তথ্যবিপ্লবের যুগে সমস্ত তথ্য বেড়িয়ে আসছে ধীরে ধীরে | হিন্দুর জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হচ্ছে তারই সাথে সাথে |


তবুও হিন্দুরা বিভ্রান্ত, অনৈক্যের শিকার ও বিপথগামী কারণ তারা নিজধর্ম সম্বন্ধে হয় অজ্ঞ নয় উদাসীন | তার ওপর আবার আছে নানান মুনির নানান মত যা হিন্দুর মাথাটাই গুলিয়ে দিয়েছে | একদিকে গোঁড়া বৈষ্ণববাদ যা শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া অন্য কোন দেবদেবীরূপে পরমেশ্বরকে মানতে নারাজ, আর অপরদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের তথাকথিত অতি উদার সর্বধর্মসমন্বয়ের মতবাদ ও লঘুপ্রচার প্রায় সত্যের একপ্রকার অপলাপই বলা চলে যেভাবে তা প্রতিষ্ঠা করতে বাছাই করে ঠাকুর-মা-স্বামীজীর বিশেষ কোন কোন বাণী প্রচার করেন তাঁরা ও বাছাই করে তাঁদেরই আর কোন কোন বাণী জনমানসের সমক্ষে আনেন না যদিও তাঁদের পুস্তকপ্রকাশনে সবই উপলব্ধ |


এখন প্রশ্ন হচ্ছে হিন্দুরা নিজধর্ম সম্বন্ধে এত উদাসীন কেন? এর কয়েকটি কারণ |


এক : হিন্দু অতি প্রাচীন জাতি | ফলে দীর্ঘ পথপরিক্রমা করার ফলে হিন্দুরা শ্রান্ত | যে শক্তি প্রয়োজন জাতির উত্থানের জন্য তা প্রায় সহজলভ্য নয় তার পক্ষে | কতিপয় শক্তিধর পুরুষ ও নারী এই বিরাট জাতিকে ধারণ করে রেখেছে কিন্তু জনসাধারণ আভ্যন্তরীণ দীর্ঘ অবেহেলার ফলে সে শক্তি হতে বঞ্চিত | সংখ্যালঘিষ্ঠ উচ্চবর্ণের অবেহেলা ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবর্ণের মানুষগুলিকে নরচ্ছায়ায় পরিণত করেছে | হিন্দুসমাজ তাই দুবর্ল, অতি দুর্বল | জনসাধারণের শাস্ত্রশিক্ষাই এর প্রতিকার |


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment