Tuesday 10 July 2018

বাংলা লেখা ... ৩


আহা, এমন ঠাকুর, তাঁর নামে বেঁচেও সুখ, তাঁর নামে মরেও সুখ !

প্রয়োজনকে অতিক্রম করে যে কর্ম, সেই সেবা, সেই পূজা |

উদারচিত্ত যিনি, যিনি সকলের সহমর্মী, তিনিই সাধু, তিনিই মানববন্ধু |

পরাধীনতার একটি লক্ষণ পরশ্রীকাতরতা |

ধনী তিনি যিনি জানেন যে তাঁর সকল সম্পদ মানবসমাজের কল্যানকল্পে ব্যবহারের জন্য তাঁর কাছে গচ্ছিত আছে মাত্র |

এত বিভাজন ভালো নয় | জাতীয় সংহতি রক্ষাকল্পে সকল নাগরিকের একটিই পরিচয় হওয়া শ্রেয় -- ভারতীয় |

ব্রহ্মচর্যের অভাবে আজ জাতির মেরুদন্ড ভগ্নপ্রায়, রাজনীতি কলুষিত, মূল্যবোধ লুপ্তপ্রায় |

সন্তান-সন্ততীর সম্মুখে স্বামীজির উজ্জ্বল আদর্শ তুলে ধরুন | দেখবেন, কি বিপুল উৎসাহে অনুপ্রাণিত হবে ওরা |

দেহ আর দেহী মাঝে মাঝে বিযুক্ত হয়ে পড়ে ক্ষণকালের তরে | তখন মুক্তির আভাস মেলে শূণ্যসত্তায় |

সংগীতের মূর্ছনায় এবার জাগবে মাতৃশক্তি, ঊর্দ্ধগতি হবে মহাবায়ু | সপ্তস্বর ভেদ করে সুরে সিদ্ধি, ভাসমানসত্তায় অবস্থান |

ধ্রবপদ সাধনে স্বরে স্থিতি, সংগীতের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান | এরপর স্বরভেদ, মহাশূণ্যে গমন |

দীর্ঘ দ্বাদশবর্ষ স্বরসাধনার পরই রবীন্দ্রসংগীত চর্চা শুরু করা শ্রেয় | নচেৎ, ধ্রপদাঙ্গের গান কন্ঠ ধারণ করবে কেমন করে ?

বৈরাগ্য চেতনার প্রথম লক্ষণ, অহংবিলুপ্তি সর্বলক্ষণের অন্তেষ্টিক্রীয়া |

মহাপ্রলয়ের শেষে অবশেষসত্তা, ' আমি ' |

মহানিশার অন্তিম প্রহর আগতপ্রায়, এইবার মহাপ্রস্থানের পথে গমন | কিন্তু এ যে চকিতভ্রমণ, ভগ্নস্বপ্ন, মহাজাগরণ |

যা হারায় তা আবার ফিরে আসে পরিবর্ধিত হয়ে, চৈতন্যের আলোকে রঞ্জিত, দীপ্ত, প্রতিভাসিত |

ঘুম ভাঙলে দেখা যাবে যে চিরজাগ্রত আমি | এক অখন্ডসত্তা, একক, অস্তিমাত্রম্ |

এই রথীরূপ আত্মার সাক্ষাৎকারেই মোক্ষলাভ | যিনি এই বামনকায় রথীর দর্শনলাভ করেছেন, তাঁর আর পুনর্জন্ম হয় না |

সবই যে সরে সরে যায় | চলমান ব্রহ্মাণ্ডে স্থিতি কোথায় ? প্রজ্ঞায় কৈবল্য, ব্রাহ্মীস্থিতি | প্রজ্ঞানম ব্রহ্ম |

আজ বিদায়ের বেলা নয়, আবার দেখা হবে |

সপ্তযবনিকার অন্তরালে আনন্দসত্তা | সেই ভূমার অখন্ড অবস্থানে লীলানাট্য সংঘটিত হচ্ছে | শেষে মহাশূণ্যে একক অবস্থান |

সবই তো মাঝের কথা চলছে, পরিসমাপ্তি তো অন্যরূপ | অজ্ঞান ও জ্ঞানের মাঝে সমুদ্রসম ব্যবধান |

সমগ্র শক্তি নিহিত হৃদয়ের প্রসারে | বিশ্বমানব একসূত্রে গাঁথা, সূত্রধর স্বয়ং বাসুদেব | তিনিই আবার সূত্রসত্তা |

এই ক্ষুদ্রসত্তাটির রক্ষণকল্পে আর কত মানুষের ক্ষতি করব ? এবার সম্মিলিত উন্নয়নে সচেষ্ট হই, আসুন |

জীব, অর্থাৎ, অন্তঃচৈতন্যবিশিষ্ট যা | তাহলে কেমন করে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে জীবন কাটাই ?

সত্ত্বগুণের সাধনা করুন | সাধনার ফল হবে জগৎকল্যাণ |

জগতে অনেক দুঃখ, আর বাড়াবেন না | অসুরনিধনপশ্চাৎ শান্তির জল প্রতীকমাত্র, প্রকৃত শান্তির জল ছেটান |

সর্বচরাচর চৈতন্যময়, ঈশ্বর দিকে দিকে | মানুষ সর্বোচ্চ বিগ্রহ, প্রাণপ্রতিষ্ঠিত, পূজার যোগ্যতম প্রতিমা |

গর্ভ উন্নত হয় পবিত্রতা অবলম্বনে | নারী-পুরুষের যুগ্ম পবিত্রতার আহ্বানে মহামানবের আবির্ভাব হয় |

শ্রদ্ধা হারিও না, হে বঙ্গযুবক ! ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে ত্যাগব্রতে দীক্ষিত হও | দেহমন শুদ্ধ হোক !

বাংলার ছেলেদের ওপর স্বামীজির অনেক আশা ছিল | এসো ভাই, নাস্তিকতা বর্জন করে মানুষ হও |

ভাবা যায় -- কুটনো কুটতে কুটতে হঠাৎ হাতটি স্থীর হয়ে গেল আর সমাধি ? মায়ের গুপ্তলীলার নিদর্শন |

শ্রীরামকৃৃষ্ণ ছাঁচ আর আমরা নরম পলীমাটি | গড়ে নেব কি এই ছাঁচে ঢেলে নিজেদের ?

যাঁর আপন-পর বোধ আছে, তাঁর অধ্যাত্মজীবনের সূচনা এখনও হয় নি |

হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে যে অনাহত ধ্বনি ওঠে, তারই নাম নাদ, নাদব্রহ্ম |

যাঁকে কষ্ট দেন, তিনি তো ঠাকুর-মা ছদ্মবেশে | এরপরও কি কষ্ট দেবেন ?

পুরুষের অত্যাচারে স্ত্রীলোক জর্জরিত, আবার স্ত্রীলোকের অত্যাচারেও পুরুষ জর্জরিত | সহৃদয় হোন একে অপরের প্রতি |

যিনি ঈশ্বরপরায়ণ, তিনি তো কোমলস্বভাব, উদার, হৃদয়বান, প্রশস্তচিত্ত | সেবাবুদ্ধি তাঁর সহজাত |

সমাজে বিদ্যারূপ মানুষ বড়ই বিরল, তাই সমাজের এই হাল | শুধু ভোগবাদ, ত্যাগের লেশমাত্র নেই |

যা কিছু মানুষকে ঈশ্বরমুখী করে, তারই নাম 'বিদ্যা', আর, যা মানুষকে ঈশ্বরবিমুখ করে, তাই 'অবিদ্যা ' |

স্ত্রী, পুরুষ, উভয়েরই বিদ্যা বাঞ্ছণীয়, অবিদ্যা বর্জনীয় | নইলে মনুষ্যত্ব খর্ব হয় |

স্ত্রীজাতি মাতৃপ্রতিম হবেন, এই তো বিদ্যার সংস্কার থাকলে হওয়ার কথা |

শুধু মুখ-হাত-পা ধুয়ে কি হবে ? মনটা ধুয়ে ফেলুন, তবে তো শুদ্ধ হবেন |

ঠাকুর ছাড়া আজ আর তো কেউ সহায় রইলেন না | কৃপা !

অসম্মান, অপমান, অত্যাচার --- এই তিন এর প্রহার হতে আত্মরক্ষার অমোঘ উপায় অনুরাগের সাথে কথামৃত পাঠ |

ঘরে বাইরে অপমান, করবেন কি ? ঠাকুর-মাকে ভালোবাসুন | অনাসক্তি আসবে, নির্মোহ হবেন, শান্তি পাবেন |

স্ত্রীলোক কঠিনপ্রাণ হলে সংসারের সর্বনাশ হয় |

প্রতিপক্ষের পুরো কথা না শুনে নিজের পূর্বনির্ধারিত উত্তর দেওয়া ব্যাধিসম | এতে সংযোগ ব্যাহত, বিচ্ছিন্ন হয় |

সবাই সবাইকে ঠকাচ্ছে | ফল ? সমাজের অবক্ষয় |

গণতন্ত্রে তো সবাই রাজা কিন্তু রাজবুদ্ধি কই ?

মহাপুরুষ তিনি যিনি সেই মহান পুরুষকে লাভ করেছেন |

সর্বত্র শরীর আমার, কার প্রতি বিরূপ হব ? তবে অবিদ্যার সাথে আপোষ চলে না, নিজের অবিদ্যার সাথেও না |

জীবনের তীব্র মধ্যমে পতিত, এখন শুদ্ধ মধ্যমে ফেরার সাধনা |

এই ব্রহ্মাণ্ড ব্রহ্মের ওপর আচ্ছাদিত, স্বরূপকে দেখতে দেয় না |

ক্ষুদ্রকে নিয়ে থাকলে আর মহৎকে পাবেন কী করে ?

হৃদয়ের প্রসার ধর্মলাভের লক্ষণ |

আমরা সবাই একে অপরের অতি নিকটজন | শুধু অবিদ্যাবশতঃ এই স্বার্থবোধ ও দূরত্ব সৃষ্টি | নিস্বার্থপরতাই তাই ধর্মের প্রাণকেন্দ্র |

সুরের সাধনা ঠিক ঠিক করতে হলে জীবনে সর্বপ্রকার সংযম পালন অপরিহার্য | বাসনাক্লিষ্ট মন সুরসাধনার অনুপযোগি |

No comments:

Post a Comment