Saturday 30 April 2022

জাতিভেদবিষয়ক দুটি কথা 


জাতিভেদবিষয়ক দুটি কথা 


যতক্ষণ মানুষ, ততক্ষণ জাতিভেদ | ব্রহ্মবিজ্ঞানে উপনীত হলে আর জাতি থাকে না | তার আগে সর্বত্র তা পরিলক্ষিত -- ধর্মের, অর্থের, সমাজের, বর্ণের, সংস্কৃতির ও প্রভাবপ্রতিপত্তির ক্ষেত্রে জাতিভেদ |


আর একটি কথা | মানুষ জাতির ঊর্দ্ধে একথা বলছেন বটে কিন্তু ভুলে যাবেন না যে জীবজগতে মানুষও কিন্তু একটি বিশেষ জাতি | একইভাবে মনুষ্যকুলেও প্রাকৃতিক বৈচিত্রহেতু অসংখ্য জাতি কিন্তু অন্তরতম প্রদেশে, যেখানে মানুষ স্বস্বরূপে বিলীন হয়ে আর মানুষ, এই নামরূপ হারিয়ে ফেলে, সেখানে আত্মার একত্বের পূর্ণতায় সমস্ত বৈচিত্র বিলুপ্ত হয় ও ব্রহ্মসত্তায় জাতি লোপ পায় | এই অর্থেই হয়ত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর অভিনব বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, "এক উপায়ে জাতিভেদ উঠে যেতে পারে | ভক্তের জাত নেই |" কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে সামাজিকভাবে জাতি উঠে গেলেও সৃষ্টির বৈচিত্রতাহেতু জাতিভেদ থেকেই যাবে মানুষের অবিদ্যা যতক্ষণ থাকবে | মায়ার রাজ্যে বিভেদ থাকবেই, জাতিও থাকবে তাই, সে যে ছদ্মবেশেই হ'ক না কেন | গভীর তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে ঠাকুরের ঐ 'ভক্ত' আখ্যাটি শুদ্ধাভক্তিপ্রাপ্ত মহাপুরুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য কারণ ঠাকুরের মতে শুদ্ধ ভক্তি ও শুদ্ধ জ্ঞান একই বস্তু, শুধু প্রকাশে ভাষাগত, ভাবগত আপাতপার্থক্যমাত্র | শুদ্ধজ্ঞানে একত্ববুদ্ধি, অতএব তা জাতির ঊর্দ্ধে | আবার শুদ্ধাভক্তিপ্রাপ্ত মহাপুরুষ সমাধিভূমি হতে আপেক্ষিক স্তরে ফিরে আসার পর জীবের প্রতি, বিশ্বচরাচরের প্রতি মহাপ্রেমে আর বিভাজিতবুদ্ধি রক্ষা করতে পারেন না |


আবার আপনি সংগীতে স্বরসপ্তক আছে ও জাতি নেই, তাই সংগীত ঈশ্বরলাভের একটি মার্গ, একথা বলেছেন | কিন্তু সংগীতে তো অবশ্যই জাতি আছে | ভারতীয় শাস্ত্রীয় রাগসংগীত তো নানা জাতিতে বিভক্ত, একথা যে কোন শাস্ত্রীয়সংগীতশিক্ষার্থিই জানেন | সংগীতের পরম পরিণতি যে অনাহত ওঁকার 🕉 ধ্বনিতে, সেইখানেই জাতির প্রায়পরিসমাপ্তি আহতধ্বনির পারে প্রায়প্রাপ্তসাম্যে | একমাত্র ব্রহ্ম অবস্থাতেই জাতির পূর্ণ বিলুপ্তি হয়, অন্য কোন স্তরে নয় |


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment