Monday 5 February 2024

শিবজ্ঞানে জীবসেবা ... ১


শিবজ্ঞানে জীবসেবা ... ১

--------------------------


মোটের ওপর কর্ম সেবা নয় | সেবার গতি সূক্ষ্ম, শ্রদ্ধায় স্থিত, ক্ষিপ্র অথচ ধীর | সত্যশিবসুন্দরের পূজা সেবা | তাতে বৈষম্যদোষ থাকে না, থাকে সমদৃষ্টি, সমভাব | অবশ্য রাজধর্মপালনে, রাজশাসনে ন্যায়দণ্ড তো ধারণ করতেই হয় | তাই সেবারও ক্ষেত্রবিশেষ আছে | কিন্তু যে ধর্মে সধর্মীবিধর্মীর বিশেষ ব্যবস্থা, সৃষ্টিকর্তানিয়োজিত স্বর্গনরকের বিশেষ আয়োজন, সে ধর্মে সেবার পরিধি সীমিত, হৃদয়ের অনুপাতে | তার প্রবর্তক ও নিয়ামকও হৃদয়ের ব্যাপ্তিতে অপ্রশস্ত, তাই তাঁদের প্রবর্তিত মার্গ অনুচ্চ, অনুর্বর, জাগতিক, বিভেদসৃষ্টিকারি, হিংসক ও সেবাবুদ্ধিবিরহিত |


সেবা সহজ নয় | তার অনুষ্ঠানে যেমন চিত্তশুদ্ধি হয়, তেমনই তপস্যাসহায়ে চিত্ত শুদ্ধ হতে থাকলে সেবাকর্ম সঠিক মান পায় | দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর তো তাঁর মহাবাক্য বলে দিলেন সহসা, 'শিবজ্ঞানে জীবসেবা', কিন্তু তার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান যাঁরা করেছিলেন তাঁরা ছিলেন সকলেই ব্রহ্মজ্ঞানী মহাপুরুষ | 


এইটি মনে রাখা চাই---'মহাবাক্যের পালন মহাপুরুষ করেন |' তাই মহাপুরুষ হওয়া চাই | আর তার জন্য চাই তপস্যা, অন্ততঃ সহজ তপস্যা, জপধ্যানস্বাধ্যায়সম্বলিত অনারম্বর জীবনযাপন | তাহলে সেবাধিকার জন্মায়, সেবাকর্ম যথাযথ অনুষ্ঠিত হয়, সেবক ও সেবিতের হৃদয় হয় আনন্দাপ্লুত | নচেৎ, কর্মের আরম্বর হয় অনেক, তাকে সেবা বলে লোকসমক্ষে প্রতীত করার আয়োজনও হয় বিস্তর কিন্ত তাতে যথার্থ লোকহিত হয় না | বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠা আসে অর্থের সমাগমে কিন্তু অনর্থের অনুপ্রবেশও ঘটে সাথে সাথে | কালে ক্ষুদ্র ভ্রান্তি মহা বিভ্রান্তিতে রূপান্তরীত হয়ে ধর্মসঙ্কটে পরিণত হয় | অধর্মের সূচনা হয় | তারপর অবতারের পুনরাগমন ও যুগধর্মসংস্থাপন | অতএব, শাস্ত্রসম্মত ভাবটি রক্ষা করা চাই | নইলে কখন যে সেবা বাসনাবিষাক্ত হয়ে উঠবে, অবিদ্যামায়ার এই সূক্ষ্ম চালের সন্ধানও মিলবে না | জয় শ্রীরামকৃষ্ণ! 🕉 


রচয়িতা : সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment