Monday, 21 April 2025

দ্বিজপদে দ্বিতীয় পত্র




দ্বিজপদে দ্বিতীয় পত্র 

●●●●●●●●●●●●●●


হে আমার বৈষ্ণব ভাইবোনেরা,


দীক্ষা একটি অতি পবিত্র অনুষ্ঠান যা শ্রীগুরুর কাছে একবারই নেওয়া শ্রেয়ঃ ও ইষ্টমন্ত্র জপে সিদ্ধিলাভের পথে অগ্রসর হওয়ার মুখ্য উপায় | এর তাৎপর্য অসীম | যাঁর শ্রীরামকৃষ্ণচরণে একবার দীক্ষা হয়েছে তাঁকে আবার শ্রীকৃষ্ণমন্ত্রে বলপূর্বক দীক্ষা নিতে বাধ্য করা কোনোমতেই ধার্মিক সিদ্ধান্ত নয় | এহেন বলপ্রয়োগ সনাতন ধর্ম বিরোধী কার্যকলাপ যা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, মানবতার বিরুদ্ধে ঘোর অপরাধ | 


ধর্মজীবনযাপন ব্যক্তিগত ব্যাপার | আমাদের দেশের সংবিধান পূর্ণ স্বাধীনতা দেন নিজ নিজ ধর্মপালন অবাধে করার | এমত অবস্থায় যদি নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে অন্যত্র দীক্ষা নেওয়ানো হয় কাউকে যাঁর কিনা আগে থেকেই দীক্ষা হয়ে রয়েছে, সেক্ষেত্রে কি করণীয় ? অবশ্যই প্রতিরোধ | ইষ্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য করা ভয়ঙ্কর আধ্যাত্মিক অপরাধ এবং তা কোনোমতেই সমর্থযোগ্য নয় | 


যে মতুয়ার বুদ্ধি ঘোষণা করে যে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরামকৃষ্ণের চাইতে শ্রেষ্ঠতর, অতএব রামকৃষ্ণাশ্রিতাকে ছলেবলেকৌশলে কৃষ্ণাশ্রিতা করা কাম্য এবং সেই উদ্দেশ্যসাধনে উদ্যত হয়, সে মতুয়ার বুদ্ধি অনাধ্যাত্মিক, ক্রুড়, জাগতিক স্বার্থসংযুক্ত, চূড়ান্ত অকল্যাণকারী | তার দ্বারা কোনো মঙ্গল কস্মিনকালেও সংসাধিত হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই | অতএব, ওই ভাব পরিত্যাগ করুন |


গৃহবধুদের অত্যাচার করবেন না | তাঁদের বাঁচতে দিন | তাঁরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জননী | তাঁরা সুখে, শান্তিতে, আনন্দে না থাকলে যে আমরা জাতি হিসেবে নিকটকালেই নিশ্চিহ্ন হব | তাঁদের গর্ভে ভবিষ্যৎ হিন্দু জাতি, ভাবী ভারতবর্ষ | ভেবে দেখুন একবার কী গুরু দায়িত্ব বর্তায় আমাদের সকলের ওপর এই যুবতী স্ত্রীদের যথাযোগ্য সম্মানশ্রদ্ধাপ্রদর্শনপূর্বক পালন করার | নইলে যে ভারতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার |


মেয়েরা পিতৃগৃহের মায়া অতিক্রম করে যখন শ্বশুড়বাড়ীতে পদার্পন করেন, তখন তাঁদের মনে অনেক স্বপ্ন, অনেক আশাআকাঙ্ক্ষা থাকে | কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যাঁদের এ স্বপ্ন চূড় চূড় হয়ে যায় বাস্তব বর্বরতার নির্দয় কষাঘাতে | আমাদের সকলের উচিত দেখা যাতে এই অবস্থায় কোনো গৃহবধু না পড়েন | আর যদি বা দৈবদুর্বিপাকে কেউ পতিত হন এমন নির্দয় পরিবেশে, তো তাঁদের যেন আমরা সর্বভাবে সহায়তা করি ও রক্ষা করি, নিপীড়ন হতে উদ্ধার করি |


ভারী আশ্চর্য লাগে ভাবতে যে আজ এই একবিংশ শতাব্দিতেও এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে বড় বলে মনে করেন এবং সেইমত শ্রীরামকৃষ্ণকে বর্জন অথবা অতিক্রম করে শ্রীকৃষ্ণকে ইষ্টরূপে গ্রহণ করানোর প্রয়াস পান | এটি ইংরেজিতে fanaticism বলে অভিহিত যা উদার সনাতনী হিন্দুর মোটেই শোভা পায় না | কিন্তু এমনই তো হচ্ছে, হয়ে চলেছে | ভগবানের ভাগাভাগ ! কী ভয়ঙ্কর ভেদবুদ্ধি ! হিন্দুর এই চূড়ান্ত দুর্দিনে এমন গৃহযুদ্ধ করা কি সাজে? হে সাম্প্রদায়িক ভক্তবেশী অধার্মিক, ভেবে দেখবেন একবার !


নমস্কারান্তে,

সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতায় আক্রান্ত সকল নির্যাতিতা নববধুর প্রতিভূরূপী রামকৃষ্ণতনয়,

সুগত বসু (Sugata Bose)

No comments:

Post a Comment